তাঁদের মধ্যে ভালোবাসার ঢেউটা ছিল প্রবল। কিন্তু দুজনের মধ্যে ভৌগলিক দূরত্ব ছিল সাড়ে তিন হাজার মাইল। কেউ কাউকে দেখেননি। তবুও তাঁদের ভালোবাসার বঁন্ধন আলগা হয়নি। অতঃপর ইন্টারনেটেই বিয়ে। আবার অপেক্ষা। বিয়ের ১০০ দিন পর অবশেষে তাঁরা পেয়েছেন একে অপরের সান্নিধ্য। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া দুই প্রবাসী তরুণ-তরুণী দ্য ডেইলি মেইলের খবরের শিরোনাম হয়েছেন। দম্পতির নাম সাইদ ইসলাম ও মনিরা চৌধুরী।
সাইদ ইসলাম থাকেন যুক্তরাজ্যের সাউথহ্যাম্পটন শহরে আর মনিরা চৌধুরী থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায়। তাঁদের পরিচয় ইন্টারনেটের ভিডিও চ্যাটিংয়ের ওয়েবসাইট স্কাইপের মাধ্যমে। এখান থেকেই পরিচয়—ধীরে ধীরে প্রণয়, বিয়ে।
ইন্টারনেটে বিয়ের খবর আমরা অনেক আগে থেকেই জানি। সে ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ের মধ্যে যোগাযোগ না থাকলেও দুই পরিবারের মধ্যেও কিছুটা যোগাযোগ থাকে। কিন্তু সাইদ ও মনিরার সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটই ছিল একমাত্র মাধ্যম। পারিবারিকভাবে তাঁদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। ভিডিও চ্যাটিংয়ের মাধ্যমেই দুজনের পরিচয়। এই সূত্র ধরেই একসময় শুধু পরিচয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তা ভালোবাসায় রূপ নেয়। দুজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেন ইন্টারনেটেই। আর এই সিদ্ধান্তটিকে বাস্তবে রূপ দিতে মনিরা ও সাইদ তাদের পরিবারকে খুলে বলেন পুরো বিষয়টি। স্কাইপে ভিডিও চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে মনিরা ও সাইদকে দেখে দুই পরিবার। দুজনের যখন ভালো লেগেছে, তখন আর দুজনের ওই সিদ্ধান্তে বাধ সাধেননি দুই পরিবার। তাই ঘটা করেই এ বছরের সেপ্টেম্বরে বাস্তবে দেখাদেখি ছাড়াই ইন্টারনেটে দুজনের বিয়ে দিয়ে দেয় দুই পরিবার। আর স্বামী-স্ত্রীর দেখা! সেটা হয়েছে বিয়ের ১০০ দিন পর। বিয়ে করার ১০০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্তরাজ্যে সাইদের কাছে যান মনিরা। আর এটাই তাঁদের প্রথম সাক্ষাত্।
সাউথহ্যাম্পটন সোলেন ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অধ্যয়ন করা সাইদ ইসলাম বলেন, ‘মনিরাকে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে আনতে গিয়েছিলাম। শুরুতে সে খুব লজ্জা পেলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল।’
‘আমি জানি, আমাদের বিয়েটা আর সব সাধারণ বিয়ের মতো নয়। তবে এই আধুনিক বিশ্বে বিয়ের ক্ষেত্রে দূরত্ব যে বড় কোনো বাধা নয়, এটা আমি বুঝতে পেরেছি। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ এখন তাঁদের সবকিছুর অন্যের কাছে শেয়ার করতে পারছে। মনিরা আর আমি প্রায় সব সময়ই স্কাইপেতে কথা বলতাম। আমরা দুজনই দুজনের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে আলোচনা করতাম। আলোচনার পর একজন আরেকজনকে বুঝতে পেরেই আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই।’ বলছিলেন সাইদ ইসলাম।
জীবনের জন্য তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো একজনের ওপর আরেকজনের আস্থা, সততা ও বিশ্বাস। এই তিনটি বিষয়ই উপস্থিত ছিল মনিরা ও সাইদের সম্পর্কের মধ্যে। আর এ কারণেই নিজেদের খুব সুখী দম্পতি হিসেবে দেখতে চান সাইদ।
মনিরা চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘সাইদকে আমি যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম, ও আসলে ঠিক সে রকমই। সাইদ খুব ভালো মানুষ। আমরা একে অন্যের প্রতি খুবই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
মনিরা এখন সাউথহ্যাম্পটনে সাইদের পরিবারের সঙ্গেই আছেন। আসছে এপ্রিলে মনিরা আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন। তবে এই সময়টুকুর মধ্যে যুক্তরাজ্য ভ্রমণটাকে বেশ উপভোগ্য করে তুলতে চান সাইদ।
বিয়ে উপলক্ষে বাংলাদেশেও একটি অনুষ্ঠান করতে চান তাঁরা। আগামী বছরেই বাংলাদেশে সাইদের গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন নিয়ে একটি বড় ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠান করবেন বলেও আশা করছে এই দম্পতি।
সূত্র: প্রথমআলো.কম
No comments:
Post a Comment