বাংলাদেশকে ইয়াবা তৈরির প্রধান কাঁচামাল সুডোইফিড্রিন সরবরাহকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিসি)।
এ দেশ থেকে পাঠানো সুডোইফিড্রিনের কয়েকটি চালান মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে ধরা পড়েছে। আর এ কারণে বাংলাদেশকে সুডোইফিড্রিন সরবরাহকারী দেশ বলছে ইউএনওডিসি।
ঢাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ওষুধ রপ্তানির নামে এ দেশ থেকে সুডোইফিড্রিনের পাচারের তথ্য তাঁদের কাছেও রয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি অধিদপ্তর।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আহসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে পাঁচটি দেশে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সুডোইফিড্রিনের ছয়টি চালান ধরা পড়ে। তদন্ত করে দেখা যায়, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে রপ্তানির কাগজপত্র তৈরি করে এসব চালান পাঠানো হয়েছিল। তাই পাচারকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘গ্লোবাল এটিএস অ্যাসেসমেন্ট’ নামে ইউএনওডিসি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়াবার মূল উপাদান হলো অ্যাম্ফিটামিন বা মেথাঅ্যাম্ফিটামিন। আর মেথাঅ্যাম্ফিটামিন তৈরি হয় ইফিড্রিন ও সুডোইফিড্রিন থেকে রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে। এই উপাদান দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বড়ি বিশ্বব্যাপী অ্যাম্ফিটামিন-জাতীয় উত্তেজক বা এটিএস (অ্যাম্ফিটামিন টাইপ স্টিমুলেন্টস) নামে পরিচিত। আর এই মাদকটি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ইয়াবা নামে পরিচিত। ইয়াবা-জাতীয় মাদকগুলো এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইউএনওডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত হলো ইয়াবা তৈরির কাঁচামালের অন্যতম উ ৎপাদক। আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার হলো এটিএস বা ইয়াবার অন্যতম উ ৎস। আর বাংলাদেশে ওষুধশিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা হয় সুডোইফিড্রিন। আমদানি করা এই সুডোইফিড্রিনের একটা অংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। এমন কয়েকটি চালান ডমিনিকান রিপাবলিক, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাসে ধরা পড়েছে।
ঢাকায় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ১৯ আগস্ট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৮২ কেজি সুডোইফিড্রিনের একটি চালান আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে পোশাক রপ্তানির নামে ইয়াবা তৈরির এই উপাদান মালয়েশিয়ায় পাঠানো হচ্ছিল।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নথিতে দেখা যায়, ২০০৯ সালে ঢাকার (১৩০ দিলকুশা) জেনারেল ট্রেডিংয়ের নামে রপ্তানি করা ১২ কেজি সুডোইফিড্রিন ধরা পড়ে হন্ডুরাসে। একই বছর মেক্সিকো সিটিতে ধরা পড়ে ২০৩ কেজি সুডোইফিড্রিন। এই চালানটি পাঠানো হয়েছিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের আইপিটি এন্টারপ্রাইজের নামে। এরপর গত বছর হন্ডুরাসে আবার ধরা পড়ে ৪১ হাজার ৬০০টি সুডোইফিড্রিন বড়ির চালান। এই তথ্য দিল্লির ড্রাগ ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশকে জানায়। সিলেটের এলবিয়ন ল্যাবের নামে এই চালানটি পাঠানো হয়েছিল।
পরে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তদন্ত করে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি বলে নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
২০০৯ সালে ডমিনিকান রিপাবলিকেও সুডোইফিড্রিনের একটি চালান ধরা পড়ে। একই বছর মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজে ৩০ হাজার সুডোইফিড্রিন বড়িসহ ফখরুল আমিন নামের এক বাংলাদেশি ধরা পড়েন। এই দুটি ঘটনা সম্পর্কে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই।
গত বছর গুয়েতেমালায় প্রায় এক লাখ সুডোইফিড্রিন বড়ি ধরা পড়ে। তদন্তে ঢাকার সাজিদ ট্রেডিং নামের একটি ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চালানটি পাঠানোর তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে সুপারিশ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ৫২টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে ইফিড্রিন ও সুডোইফিড্রিন আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রকাশিত ‘বার্ষিক মাদক প্রতিবেদন ২০১০’ অনুযায়ী, ২০০৮ সালে ২৬ হাজার ৪০০ কেজি, ২০০৯ সালে ১১ হাজার ৫৮৭ কেজি ও ২০১০ সালে ১৪ হাজার ৫৫ কেজি সুডোইফিড্রিন এ দেশে আমদানি করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সুডোইফিড্রিন থেকে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারকেরা ব্রঙ্কোডাইলেটর ও নাজাল ডিকনজেসট্যান্ট তৈরি করেন।
চিকি ৎসকেরা জানান, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত সমস্যার জন্য ব্রঙ্কোডাইলেটর এবং ঠান্ডা বা সর্দিজনিত সমস্যায় নেজাল ডিকনজেসট্যান্ট-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
সূত্র: প্রথমআলো.কম, ০৩/১২/২০১১
এ দেশ থেকে পাঠানো সুডোইফিড্রিনের কয়েকটি চালান মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে ধরা পড়েছে। আর এ কারণে বাংলাদেশকে সুডোইফিড্রিন সরবরাহকারী দেশ বলছে ইউএনওডিসি।
ঢাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ওষুধ রপ্তানির নামে এ দেশ থেকে সুডোইফিড্রিনের পাচারের তথ্য তাঁদের কাছেও রয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি অধিদপ্তর।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আহসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে পাঁচটি দেশে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সুডোইফিড্রিনের ছয়টি চালান ধরা পড়ে। তদন্ত করে দেখা যায়, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে রপ্তানির কাগজপত্র তৈরি করে এসব চালান পাঠানো হয়েছিল। তাই পাচারকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘গ্লোবাল এটিএস অ্যাসেসমেন্ট’ নামে ইউএনওডিসি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়াবার মূল উপাদান হলো অ্যাম্ফিটামিন বা মেথাঅ্যাম্ফিটামিন। আর মেথাঅ্যাম্ফিটামিন তৈরি হয় ইফিড্রিন ও সুডোইফিড্রিন থেকে রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে। এই উপাদান দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বড়ি বিশ্বব্যাপী অ্যাম্ফিটামিন-জাতীয় উত্তেজক বা এটিএস (অ্যাম্ফিটামিন টাইপ স্টিমুলেন্টস) নামে পরিচিত। আর এই মাদকটি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ইয়াবা নামে পরিচিত। ইয়াবা-জাতীয় মাদকগুলো এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইউএনওডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত হলো ইয়াবা তৈরির কাঁচামালের অন্যতম উ ৎপাদক। আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার হলো এটিএস বা ইয়াবার অন্যতম উ ৎস। আর বাংলাদেশে ওষুধশিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা হয় সুডোইফিড্রিন। আমদানি করা এই সুডোইফিড্রিনের একটা অংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। এমন কয়েকটি চালান ডমিনিকান রিপাবলিক, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাসে ধরা পড়েছে।
ঢাকায় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ১৯ আগস্ট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৮২ কেজি সুডোইফিড্রিনের একটি চালান আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে পোশাক রপ্তানির নামে ইয়াবা তৈরির এই উপাদান মালয়েশিয়ায় পাঠানো হচ্ছিল।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নথিতে দেখা যায়, ২০০৯ সালে ঢাকার (১৩০ দিলকুশা) জেনারেল ট্রেডিংয়ের নামে রপ্তানি করা ১২ কেজি সুডোইফিড্রিন ধরা পড়ে হন্ডুরাসে। একই বছর মেক্সিকো সিটিতে ধরা পড়ে ২০৩ কেজি সুডোইফিড্রিন। এই চালানটি পাঠানো হয়েছিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের আইপিটি এন্টারপ্রাইজের নামে। এরপর গত বছর হন্ডুরাসে আবার ধরা পড়ে ৪১ হাজার ৬০০টি সুডোইফিড্রিন বড়ির চালান। এই তথ্য দিল্লির ড্রাগ ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশকে জানায়। সিলেটের এলবিয়ন ল্যাবের নামে এই চালানটি পাঠানো হয়েছিল।
পরে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তদন্ত করে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি বলে নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
২০০৯ সালে ডমিনিকান রিপাবলিকেও সুডোইফিড্রিনের একটি চালান ধরা পড়ে। একই বছর মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজে ৩০ হাজার সুডোইফিড্রিন বড়িসহ ফখরুল আমিন নামের এক বাংলাদেশি ধরা পড়েন। এই দুটি ঘটনা সম্পর্কে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই।
গত বছর গুয়েতেমালায় প্রায় এক লাখ সুডোইফিড্রিন বড়ি ধরা পড়ে। তদন্তে ঢাকার সাজিদ ট্রেডিং নামের একটি ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চালানটি পাঠানোর তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে সুপারিশ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ৫২টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে ইফিড্রিন ও সুডোইফিড্রিন আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রকাশিত ‘বার্ষিক মাদক প্রতিবেদন ২০১০’ অনুযায়ী, ২০০৮ সালে ২৬ হাজার ৪০০ কেজি, ২০০৯ সালে ১১ হাজার ৫৮৭ কেজি ও ২০১০ সালে ১৪ হাজার ৫৫ কেজি সুডোইফিড্রিন এ দেশে আমদানি করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সুডোইফিড্রিন থেকে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারকেরা ব্রঙ্কোডাইলেটর ও নাজাল ডিকনজেসট্যান্ট তৈরি করেন।
চিকি ৎসকেরা জানান, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত সমস্যার জন্য ব্রঙ্কোডাইলেটর এবং ঠান্ডা বা সর্দিজনিত সমস্যায় নেজাল ডিকনজেসট্যান্ট-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
সূত্র: প্রথমআলো.কম, ০৩/১২/২০১১
No comments:
Post a Comment