Accounting

হিসাববিজ্ঞানে ভাল রেজাল্টে আগ্রহী
এস.এস.সি , এইচ.এস.সি ও অনার্সের হিসাববিজ্ঞান নিয়ে সমস্যা আছে...
দেরী না করে নিচের লিংকে ক্লিক কর

Honours & Masters Result

নিচের লিংকে ক্লিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট পেয়ে যাবে

রাশিফল জানতে চান?

তাহলে এখনি নিচের লিংকে ক্লিক করে আপনার রাশি সম্পর্কে জেনে নিন। ২০১২ সালটি আপনার কেমন যাবে জানতে এখনি ক্লিক করুণ.....

Saturday, December 3, 2011

জয়তু সুবর্ণা আপা!


নিজের বাড়ির উঠানে হাতপাখা ও টুপিতে নকশার কাজে তদারক করছেন পীরগাছার ইটাকুমারী গ্রামের সুবর্ণা আ�
নিজের বাড়ির উঠানে হাতপাখা ও টুপিতে নকশার কাজে তদারক করছেন পীরগাছার ইটাকুমারী গ্রামের সুবর্ণা আক্তার
ছবি: প্রথম আলো
‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করছেন তাঁরা। তাঁদের হারতে হয়নি, তাঁরা জিতে চলেছেন। স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্যদের এগিয়ে নিচ্ছেন সেই পথে।
বলা হচ্ছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী গ্রামের নারীদের কথা। ‘গ্রামীণ মহিলা উন্নয়ন সমিতি’ নামে সমবায় সমিতি গড়ে বদলে ফেলেছেন নিজেদের ভাগ্য। আর এই সমিতি গড়তে গ্রামের নারীদের এক সুতোয় গেঁথেছেন একজন—সুবর্ণা আক্তার। সদস্যদের কাছে তিনি কেবলই ‘সুবর্ণা আপা’।

সুবর্ণার নেতৃত্বে ওই সমিতির সদস্যরা হাতপাখা, লেপ, টুপিতে নকশা তোলা, মাছ, সবজি ও লিচু চাষ করে ইটাকুমারীকে কর্মমুখর এক গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
শুরুর গল্প: পীরগাছা উপজেলা সদর থেকে নয় কিলোমিটার দক্ষিণের গ্রাম ইটাকুমারী। এক দশক আগেও এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ ছিল দিনমজুর।
এই গ্রামেরই সচ্ছল এক পরিবারের মেয়ে সুবর্ণা। খুব কাছ থেকে দেখা গ্রামের মানুষের এমন কষ্ট তাঁকে নাড়া দিত। কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করতেন। সেই ভাবনা থেকে তাঁর মাথায় আসে সমবায় সমিতি গড়ার কথা। বিষয়টি গ্রামের নারীদের বোঝাতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। তাঁর ডাকে সাড়া দেন নারীরাও।
সাফল্যের পথে: ২০০২ সালের ১০ জানুয়ারি। সুবর্ণা ১৪০ জন দরিদ্র নারীকে নিয়ে গঠন করেন গ্রামীণ মহিলা উন্নয়ন সমিতি। সিদ্ধান্ত হয়, সদস্যরা সপ্তাহে পাঁচ টাকা করে সমিতিতে জমা দেবেন। চার বছরে সমিতির সঞ্চয় আর তা বিনিয়োগ করে পাওয়া লাভে তহবিলে জমা হয় তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা। সদস্যরা তা ভাগ করে নেন।
২০০৫ সালে সমিতির সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫০ করা হয়। সাপ্তাহিক চাঁদা বাড়িয়ে করা হয় ১০ টাকা। দুই বছরে সদস্যদের জমা এবং তা বিনিয়োগে পাওয়া যায় তিন লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়ে ২০০৭ সালে তিন একর আয়তনের একটি পুকুর ও দুই একর ফসলি জমি ইজারা নেওয়া হয় সমিতির নামে। পুকুরে মাছ ও জমিতে সবজি চাষ করে এক বছরে খরচ বাদে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয়। মূলধন সমিতির তহবিলে রেখে লাভের অংশ সদস্যরা ভাগ করে নেন।
এগিয়ে চলা: সুবর্ণার চাওয়া ছিল, গ্রামের নারীদের স্বাবলম্বী করবেন। তাই সমিতির লাভের অংশ ভাগ করে দিয়ে চুপ থাকেননি। প্রতিবেশীদের কাছে গল্প শুনে ২০০৮ সালের শুরুতে তিনি পাশের কামদেব গ্রামের রওশন আরা বেগমের কাছে যান। তাঁর কাছ থেকে শিখে নেন হাতপাখা তৈরির কৌশল। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে সমিতির সদস্যদের হাতপাখা তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। সমিতির তহবিল থেকে পোশাক কারখানার পরিত্যক্ত রঙিন সুতা কিনে শুরু হয় হাতপাখা তৈরি ও বিক্রির কাজ।
ওই বছরের জুন মাসে সমিতির নারীরা শুরু করেন টুপিতে নকশা তোলার কাজ। এর পর থেকে সমিতির সদস্য ছাড়াও আড়াই শতাধিক নারী হাতপাখা তৈরি ও টুপিতে নকশার কাজ করছেন। পাশাপাশি অনেকে লেপ-তোষক তৈরির কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।
গৃহবধূ ছালেহা বেগম ও নাজমা আকতার জানালেন, একটি পাখা তৈরিতে ছয় থেকে সাত টাকা খরচ হয়, বিক্রি হয় ১৮ থেকে ২০ টাকায়। তাঁদের নকশা করা টুপি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্যে। একটি লেপ তৈরি করে ২০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়।
সমিতিতে এক দিন: সম্প্রতি এক সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব বাড়িতেই নারীরা কেউ হাতপাখা, কেউ লেপ তৈরি, কেউ বা টুপিতে নকশা তোলার কাজ করছেন। সুবর্ণার বাড়িতেই একটি ঘর সমিতির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহূত হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সুবর্ণা নারীদের নিয়ে সমিতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছেন।
সুবর্ণা জানালেন, সমিতির অধীনে মাছ-সবজির চাষ চলছে। চলছে হাতপাখা, লেপ তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা। ৫০ শতক আয়তনের একটি লিচুবাগান ইজারা নেওয়া হয়েছে। এসব উ ৎস থেকে আয় হওয়া অর্থ শুধু সমিতির সদস্যরাই ভাগ করে নেন না, আয়ের ৫ শতাংশ গ্রামের গরিব ছেলেমেয়েদের বিয়েতে ব্যয় করা হয়। অভাবী শিক্ষার্থীদের কিনে দেওয়া হয় বই-খাতা। এ ছাড়া সমিতির উদ্যোগে নিরক্ষর গৃহবধূদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরিচর্যা, জন্মনিয়ন্ত্রণ, যৌতুক ও বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা হয়।
সফল যাঁরা: সমিতির সদস্য আরজিনা খাতুন, খালেদা আকতারসহ কয়েকজন তাঁদের দিনবদলের গল্প শোনালেন। তাঁদের টিনের ঘর উঠেছে, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। নিজেদের হাঁস, মুরগি, গাভি, ছাগল আছে। সর্বোপরি সংসারে তাঁদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে।
হাছনা বেওয়া জানালেন, ১৫ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। এরপর ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। তবে এখন তাঁর হাঁস-মুরগি ও একটি গাভি আছে। ভিক্ষা ছেড়েছেন অনেক আগেই। এ সবই হয়েছে সমিতির সদস্য হয়ে।
২০০০ সালে এই গ্রামের চায়না বেগমের বিয়ে হয় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী গ্রামে। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তিন বছরের মাথায় এক সন্তানসহ তাঁকে বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হয়। তিনি এই সমিতির সদস্য হয়ে এখন মাসে প্রায় চার হাজার টাকা আয় করছেন।
এ ছাড়া গ্রামের লাকী বেগম, সহিদা বেগম, মঞ্জুয়ারা খাতুন, আছমা বেগম, মাজেদা খাতুনসহ অনেকের কাছেই শোনা গেল তাঁদের অভাব জয়ের গল্প।
একজন সুবর্ণা: স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নারী সদস্য গুলশান আরা বেগমের ছোট মেয়ে সুবর্ণা। বিএ পাস সুবর্ণার বিয়ে হয় একই গ্রামের আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে। তাঁদের সাড়ে তিন বছরের একটি ছেলে আছে। স্ত্রীর উদ্যোগের প্রতি সম্মান আছে স্বামী আশরাফুজ্জামানের। ‘সুবর্ণার কর্মকাণ্ডে আমরা খুশি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে সব সময় সমিতির কাজে উ ৎসাহ দিই।’ বলছিলেন তিনি।
ইটাকুমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দছিজল হক বলেন, সুবর্ণার মতো নারীই এই সমাজে প্রয়োজন। ইটাকুমারী গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কমেছে যৌতুকের প্রবণতাও। স্বাস্থ্যসচেতনতা, শিক্ষার প্রতি আগ্রহও বেড়েছে।
যেতে চান অনেক দূর: গ্রামের নারীদের জন্য আর কী করতে চান? সুবর্ণার উত্তর, ‘প্রত্যেক সদস্যকে একটি করে বিদেশি গাভির খামার করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। হাতপাখা, লেপ তৈরি ও টুপিতে নকশার কাজে পুরো উপজেলার দরিদ্র নারীদের যুক্ত করার বিষয়টিও মাথায় আছে।’
সুবর্ণা জানালেন, তাঁর স্বপ্ন—উপজেলার প্রতিটি নারী মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন। এ জন্য নারীদের সংগঠিত করে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার আওতায় এনে বাল্যবিবাহ, যৌতুকের কুফল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে চান তিনি।
সফল হোক তাঁর এই যাত্রা!

সূত্র: প্রথমআলো.কম, ০৩/১২/২০১১

No comments:

Post a Comment