মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকা ক্রমাগত দর হারাচ্ছে। চাহিদা অনুপাতে জোগান না থাকায় প্রতি মাসেই বাড়ছে ডলারের দাম। গত এক বছরে টাকার দরপতন হয়েছে ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, টাকার মূল্যপতন ঘটছে চাহিদা জোগানের স্বাভাবিক নিয়মে। হস্তক্ষেপ করে তা ঠেকাতে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বাজারে ছাড়তে হবে, যার ফল ভালো হবে না। অন্যদিকে ডলারের দাম কমানোর পদক্ষেপ নিলে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে ডলার আসার
প্রবণতা বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদে যা বৈদেশিক মুদ্রার ওপর প্রভাব ফেলবে। অর্থনীতিবিদরাও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, টাকাকে শক্তিশালী রাখতে হলে যে কোনো মূল্যে ডলার এবং অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়াতে হবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান এ বিষয়ে সমকালকে
বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যপতন অব্যাহত থাকলে আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে, যা জনজীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এতে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। তাই যে কোনো উপায়ে ডলারের জোগান বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। যদিও এভাবে টাকার মূল্যপতন হলে রফতানিকারকরা লাভবান হন বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঠেকানোটা একটি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবেলা না করা গেলে ব্যবসা, প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে। কেননা শিল্পায়নের জন্য এ দেশের উদ্যোক্তারা শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য ব্যাপক আমদানি করে থাকেন। একই সঙ্গে খাদ্যসহ অনেক পণ্য আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। সেখানে ডলারের দর বাড়তে থাকলে এসবের খরচ বাড়বে। আমদানিকারকরা খরচ মেটাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবেন। যা সরাসরি মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২৩ নভেম্বর টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে ৭৬ টাকা ৬৫ পয়সা। গত বছরের একই দিন যা ৭০ টাকা ৩০ পয়সা ছিল। এ হিসাবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে এক বছরে ডলারের দরপতন হয়েছে ৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর ছিল ৭৮ টাকা ২০ পয়সা। আগের বছরের একই দিন যা ৭১ টাকা ৫০ পয়সার মতো ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে টাকার দরপতন ঠেকাতে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক কমে যাবে। যদিও রিজার্ভ থেকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। তা না হলে টাকার আরও দরপতন হতো। আমদানি ব্যয়, দেশের বাইরে ভ্রমণসহ নানা কারণে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। তবে রফতানি আয় সে হারে বাড়েনি। অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে দীর্ঘদিন ধরে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগ বা সাহায্য একেবারে আসছে না বললেই চলে।
সূত্র জানিয়েছে, চাহিদা অনুপাতে জোগান না থাকায় টানা ২২ মাস পর গত সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ এক হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে। অক্টোবরে ওই রিজার্ভ আবার এক হাজার কোটি ডলার ছাড়ালেও চলতি মাসে তা আবার নিচে নেমে যায়। ১৫ নভেম্বরের হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯৬২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ছিল। সর্বশেষ ২২ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী সেটি আরও কমে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৯৪২ কোটি ডলারে।
এ বিষয়ে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি আপৎকালীন খাদ্য আমদানির জন্য অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন। তবে আমাদের দেশে ডলারের চাহিদা বাড়ায় বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের একটু কম রয়েছে। তাই এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে সমস্যা উত্তরণের জন্য বৈদেশিক সাহায্য, ঋণ ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, সমস্যা কাটাতে ব্যাংকের সঙ্গে কার্ব মার্কেটে ডলারের দরের যেন বেশি পার্থক্য না থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। কেননা ব্যাংকের বাইরে দর বেশি পেলে প্রবাসীদের মধ্যে অবৈধ পথে ডলার পাঠানোর প্রবণতা বাড়ে।
সূত্র: ওবায়দুল্লাহ রনি,সমকাল, ২৮/১১/২০১১
প্রবণতা বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদে যা বৈদেশিক মুদ্রার ওপর প্রভাব ফেলবে। অর্থনীতিবিদরাও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, টাকাকে শক্তিশালী রাখতে হলে যে কোনো মূল্যে ডলার এবং অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বাড়াতে হবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান এ বিষয়ে সমকালকে
বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যপতন অব্যাহত থাকলে আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে, যা জনজীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এতে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। তাই যে কোনো উপায়ে ডলারের জোগান বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। যদিও এভাবে টাকার মূল্যপতন হলে রফতানিকারকরা লাভবান হন বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঠেকানোটা একটি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবেলা না করা গেলে ব্যবসা, প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে। কেননা শিল্পায়নের জন্য এ দেশের উদ্যোক্তারা শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য ব্যাপক আমদানি করে থাকেন। একই সঙ্গে খাদ্যসহ অনেক পণ্য আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। সেখানে ডলারের দর বাড়তে থাকলে এসবের খরচ বাড়বে। আমদানিকারকরা খরচ মেটাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবেন। যা সরাসরি মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২৩ নভেম্বর টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে ৭৬ টাকা ৬৫ পয়সা। গত বছরের একই দিন যা ৭০ টাকা ৩০ পয়সা ছিল। এ হিসাবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে এক বছরে ডলারের দরপতন হয়েছে ৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর ছিল ৭৮ টাকা ২০ পয়সা। আগের বছরের একই দিন যা ৭১ টাকা ৫০ পয়সার মতো ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে টাকার দরপতন ঠেকাতে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক কমে যাবে। যদিও রিজার্ভ থেকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। তা না হলে টাকার আরও দরপতন হতো। আমদানি ব্যয়, দেশের বাইরে ভ্রমণসহ নানা কারণে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। তবে রফতানি আয় সে হারে বাড়েনি। অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে দীর্ঘদিন ধরে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগ বা সাহায্য একেবারে আসছে না বললেই চলে।
সূত্র জানিয়েছে, চাহিদা অনুপাতে জোগান না থাকায় টানা ২২ মাস পর গত সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ এক হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে। অক্টোবরে ওই রিজার্ভ আবার এক হাজার কোটি ডলার ছাড়ালেও চলতি মাসে তা আবার নিচে নেমে যায়। ১৫ নভেম্বরের হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯৬২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ছিল। সর্বশেষ ২২ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী সেটি আরও কমে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৯৪২ কোটি ডলারে।
এ বিষয়ে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি আপৎকালীন খাদ্য আমদানির জন্য অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন। তবে আমাদের দেশে ডলারের চাহিদা বাড়ায় বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের একটু কম রয়েছে। তাই এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে সমস্যা উত্তরণের জন্য বৈদেশিক সাহায্য, ঋণ ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, সমস্যা কাটাতে ব্যাংকের সঙ্গে কার্ব মার্কেটে ডলারের দরের যেন বেশি পার্থক্য না থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। কেননা ব্যাংকের বাইরে দর বেশি পেলে প্রবাসীদের মধ্যে অবৈধ পথে ডলার পাঠানোর প্রবণতা বাড়ে।
সূত্র: ওবায়দুল্লাহ রনি,সমকাল, ২৮/১১/২০১১
No comments:
Post a Comment