বাংলা ক্যালেন্ডার যা বাংলা সাল নামে পরিচিত তা ১৫৮৪ সালে ,মুঘল সম্রাট আকবরের সময় সরকারীভাবে চালু করা হয়। এটা প্রথমে তারিখ-এ-এলাহি নামে পরিচিত ছিল এবং ১৫৮৪ সালের ১১ মার্চ চালু করা হয়। যদিও এটা আকবর-এর রাজত্বের ২৯ বছর চালু করা হয় তবুও এর গননা করা হয় ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ সাল থেকে যখন সম্রাট আকবর সিংহাসনে বসেন।
তারিখ-এ-এলাহি-র উদ্দেশ্য ছিল আকবর রাজত্বকে আরো গৌরবময় করে তোলা এবং রাজস্ব আদায়ে কিছু সুবিধার জন্য। এর আগে মোঘল সম্রাট হিজরী সাল ব্যবহার করছিলেন রাজস্ব আদায়ের কাজে। কিন্তু হিজরী সাল ব্যবহার এর কারণে কৃষকদের সমস্যা হত কারণ চন্দ্র ও সৌর বছরের মধ্যে ১১ বা ১২ দিনের পার্থক্য ছিল। ফলে ৩১ টি চন্দ্র বছর ৩০ টি সৌর বছর এর সমান হয়ে যেত। এখন রাজস্ব চন্দ্রবছর অনুযায়ী আদায় করা হত আর চাষাবাদ করা হত সৌরবছর অনুযায়ী। সম্রাট আকবর তার শাসনের প্রথমেই এই সমস্যা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং এর একটি বৈজ্ঞানিক কিন্তু কার্যকার সমাধান খুঁজছিলেন। তাই তিনি প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক এবং জ্যোতির্বিদ আমির ফাতুল্লাহ শিরাজীকে পরিবর্তন আনার আদেশ দেন।
এখন, ৯৬৩ মহররমের প্রথম মাসকে তারিখ-এ-এলাহির প্রথম মাস ধরে গননা করা শুরু হয়। যেহেতু ৯৬৩ মহররমের প্রথম মাস বৈশাখ মাসের সাথে মিলে যায় তাই বৈশাখই হয় তারিখ-এ-এলাহি-র প্রথম মাস।(আগে শাকাব্দ অনুযায়ী চৈত্র মাসকে প্রথম মাস হিসেবে ব্যবহার করত বাঙ্গালীরা)
তারিখ-এ-এলাহি-র শুরুর পর যে ৪০০+ বছর অতিবাহিত হয়েছে তাতে হিজরী এবং বাংলা সালের মধ্যে ১৪ বছরের ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে, কারণ হিজরী হিসাব করা হয় চন্দ্রকে ভিত্তি করে আর বাংলা সাল হিসাব করা হয় সূর্যকে ভিত্তি করে। কিন্তু বাংলা সাল আর গ্রেগরিয়ান সাল-এর মধ্যে কোনো পার্থক্য হয়নি কারণ উভয়-ই সূর্য-কে ভিতি করে গননা করা হয়।
আকবরের রাজত্বের সময় মাসের প্রত্যেকদিনের আলাদা নাম ছিল। কিন্তু যেহেতু মাসের ৩১দিনের ৩১টা নাম মনে রাখা কষ্টকর তাই আকবরের প্রপৌত্র শাহজাহান সপ্তাহ পদ্ধতির সুচনা করেন তার ফসলী সাল পদ্ধতিতে। তার সময়কার সপ্তাহের নামকরণঃ
১.সূর্য এর জন্য রবি(Sunday)
২. চাঁদ এর জন্য সোম(Monday)
৩.মঙ্গল গ্রহ এর জন্য মঙ্গল(Tuesday)
৪. বুধ গ্রহের জন্য বুধ(Wednesday)
৫. বৃহস্পতি গ্রহের জন্য বৃহস্পতি(Thursday)
৬.শুক্র গ্রহের জন্য শুক্র (Friday)
৭.শনি গ্রহের জন্য শনি(Saturday)
প্রথমদিকে মাস এর নাম ছিল ফারওয়ারদিন, খোরদাদ, তীর, মুরদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আযার, দে, বাহমান etc. এটা জানা যায় নি যে কেন মাস গুলোর নাম এখন বৈশাখ জৈষ্ঠ দেয়া হয়েছে তবে মনে করা হয় যে ৭৮খ্রিস্টাব্দে সাকা জাতির রাজত্বের সময় প্রচলিত শাকাব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। মাসের নামঃ
এখন, ৯৬৩ মহররমের প্রথম মাসকে তারিখ-এ-এলাহির প্রথম মাস ধরে গননা করা শুরু হয়। যেহেতু ৯৬৩ মহররমের প্রথম মাস বৈশাখ মাসের সাথে মিলে যায় তাই বৈশাখই হয় তারিখ-এ-এলাহি-র প্রথম মাস।(আগে শাকাব্দ অনুযায়ী চৈত্র মাসকে প্রথম মাস হিসেবে ব্যবহার করত বাঙ্গালীরা)
তারিখ-এ-এলাহি-র শুরুর পর যে ৪০০+ বছর অতিবাহিত হয়েছে তাতে হিজরী এবং বাংলা সালের মধ্যে ১৪ বছরের ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে, কারণ হিজরী হিসাব করা হয় চন্দ্রকে ভিত্তি করে আর বাংলা সাল হিসাব করা হয় সূর্যকে ভিত্তি করে। কিন্তু বাংলা সাল আর গ্রেগরিয়ান সাল-এর মধ্যে কোনো পার্থক্য হয়নি কারণ উভয়-ই সূর্য-কে ভিতি করে গননা করা হয়।
আকবরের রাজত্বের সময় মাসের প্রত্যেকদিনের আলাদা নাম ছিল। কিন্তু যেহেতু মাসের ৩১দিনের ৩১টা নাম মনে রাখা কষ্টকর তাই আকবরের প্রপৌত্র শাহজাহান সপ্তাহ পদ্ধতির সুচনা করেন তার ফসলী সাল পদ্ধতিতে। তার সময়কার সপ্তাহের নামকরণঃ
১.সূর্য এর জন্য রবি(Sunday)
২. চাঁদ এর জন্য সোম(Monday)
৩.মঙ্গল গ্রহ এর জন্য মঙ্গল(Tuesday)
৪. বুধ গ্রহের জন্য বুধ(Wednesday)
৫. বৃহস্পতি গ্রহের জন্য বৃহস্পতি(Thursday)
৬.শুক্র গ্রহের জন্য শুক্র (Friday)
৭.শনি গ্রহের জন্য শনি(Saturday)
প্রথমদিকে মাস এর নাম ছিল ফারওয়ারদিন, খোরদাদ, তীর, মুরদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আযার, দে, বাহমান etc. এটা জানা যায় নি যে কেন মাস গুলোর নাম এখন বৈশাখ জৈষ্ঠ দেয়া হয়েছে তবে মনে করা হয় যে ৭৮খ্রিস্টাব্দে সাকা জাতির রাজত্বের সময় প্রচলিত শাকাব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। মাসের নামঃ
১.বিশাখা(Librae) থেকে বৈশাখ
২.জাইষ্ঠা(Scorpii) থেকে জৈষ্ঠ
৩.আষাঢ়া(Sagittarii) থেকে আষাঢ়
৪.শ্রাবনা(Aquilae) থেকে শ্রাবন
৫.ভাদ্রপাদা(Pegasi) থেকে ভাদ্র
৬.আশ্বিনী(Arietis) থেকে আশ্বিন
৭. কৃতিকা(Tauri) থেকে কার্তিক
৮. পুস্যা(Aldebaran) থেকে পৌষ
৯.আগ্রৈহনী(Cancri) থেকে আগ্রহায়ন
১০.মাঘা(Regulus) থেকে মাঘ
১১.ফাল্গুনী(Leonis) থেকে ফাল্গুন
১২.চিত্রা(Virginis) থেকে চৈত্র
বাংলা সালের দৈর্ঘ্য ৩৬৫ দিন। কিন্তু পৃথিবীর সুর্য কে প্রদক্ষিন করতে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড লাগে। এই ঘাটতি দূর করার জন্য গ্রেগরিয়ান সালে প্রতি চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারী মাসের সাথে একদিন যোগ করা হয়(শুধু যে শত বছর ৪০০ দিয়ে ভাগ হয় সে বছর যোগ করা হয় না)। শুরুর দিকে বাংলা সাল এই অতিরিক্ত সময়কে গননায় নেয় নি। পরে এই ঘাটতি দূর করার জন্য বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধায়নে এবং মুহাম্মদ শহীদুল্লাহের পরিচালনায় একটা কমিটি গঠন করা হয় ১৯৬৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী।
পরে কমিটির সুপারিশ-এ বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাস কে ৩১ দিনের এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস গুলো ৩০ দিনের হিসাবে গননা করা শুরু হয়। আর প্রতি চার বছর পর পর চৈত্র মাস কে ৩১ দিন ধরা হয়।
এভাবেই বর্তমান বাংলা সাল চলে আসছে
বাঙালির উৎসব বৈশাখ
বাংলা নববর্ষ শুরুর ইতিহাস নিয়ে আছে নানা বিতর্ক। তা সত্ত্বেয় বৈশাখ মাসএবং বাংলা সন নিয়ে মোটামুটি গ্রহনযোগ্য ইতিহাস এবং পাশাপাশি বিন দেশেরবর্ষ বরন এই প্রতিবেদনের উপজীব্য।
বৈশাখ মাসের নমকরনঃ
যে মাসটিকে আমরা বৈশাখ বলি, সেই মাসে চাঁদ বিশাখা নক্ষত্রে আসিয়া পূর্ণিমাদেখায়, তাই মাসটির নাম হইয়াছে বৈশাখ।’
যে মাসটিকে আমরা বৈশাখ বলি, সেই মাসে চাঁদ বিশাখা নক্ষত্রে আসিয়া পূর্ণিমাদেখায়, তাই মাসটির নাম হইয়াছে বৈশাখ।’
বাংলা সনের ইতিকথাঃ
ইতিহাসে আছে, বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন হয় ষোড়শ শতকে, মোগল সম্রাটআকবরের শাসনকালে। সম্রাটের নির্দেশে তার বিজ্ঞ রাজ-জ্যোতিষী আমীরফতেহউল্কèাহ সিরাজীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই প্রধানত বাংলা সালেরউৎপত্তি। তিনি হিজরি চান্দ্র বছরকে অত্যন্ত সুকৌশলে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সৌরবছরে রূপান্তরিত করেন। ফলে হিজরি ৯৬৩ সাল থেকেই বাংলা সালের জন্মহয়, যা ‘ফসলি আন্ধ’ নামেও পরিচিত ছিল। বৈশাখের প্রথম দিন প্রজাদের কাছথেকে খাজনা আদায় করা হতো। শুকনো মৌসুমে খাজনা আদায়ে সুবিধা হতোবলে এই রীতি তৈরি হয়েছিল, এমন ধারণা করা হয়।
ইতিহাসে আছে, বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন হয় ষোড়শ শতকে, মোগল সম্রাটআকবরের শাসনকালে। সম্রাটের নির্দেশে তার বিজ্ঞ রাজ-জ্যোতিষী আমীরফতেহউল্কèাহ সিরাজীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই প্রধানত বাংলা সালেরউৎপত্তি। তিনি হিজরি চান্দ্র বছরকে অত্যন্ত সুকৌশলে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সৌরবছরে রূপান্তরিত করেন। ফলে হিজরি ৯৬৩ সাল থেকেই বাংলা সালের জন্মহয়, যা ‘ফসলি আন্ধ’ নামেও পরিচিত ছিল। বৈশাখের প্রথম দিন প্রজাদের কাছথেকে খাজনা আদায় করা হতো। শুকনো মৌসুমে খাজনা আদায়ে সুবিধা হতোবলে এই রীতি তৈরি হয়েছিল, এমন ধারণা করা হয়।
নানা জাতির বর্ষবরণ
পৃথিবীর প্রতিটি জাতিই নিজ নিজ বছরের প্রথম দিনকে বরণ করে নেয় নিজস্ব সাংষ্কৃতিক রীতি অনুসারে। সব জাতির সংষ্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নববর্ষেরপ্রথম দিনটি বরণের ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাসও রয়েছে। প্রাচীন আরবীয়রা ওকাবেরমেলা পালন করত, ইরানিরা নওরোজ উৎসব এবং প্রাচীন ভারতীয়রা দোলপূর্ণিমার দিন নববর্ষ উদযাপন করত। মেক্সিকোর নববর্ষের সূচনার সময়অর্থাৎ রাত ১২টা বাজার ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে কেউ যদি একটি করে আঙ্গুরখায়, প্রতিটি ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে নতুন বছর তাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবেবলে মনে করে।
চেরিফুলের দেশ জাপানেও নববর্ষে দরজার মুখে গলদা চিংড়ি, কাঁকড়া আরউজ্জ্বল রঙের ফল ঝুলিয়ে রাখা হয়। এর ফলে বাড়িতে সুখ নেমে আসবে এরকম ধারণা করা হয়। থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামেও নববর্ষে ধানের ছড়াঝুলিয়ে রাখা হয়। চীন ও বার্মায় নববর্ষের প্রথম দিন গাছ এবং পাহাড়েরচূড়ায় প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। প্রচার আছে, ভাগ্য ও ফসল ভালো হওয়ারজন্যই তারা এ কাজটি করেন।
পৃথিবীর প্রতিটি জাতিই নিজ নিজ বছরের প্রথম দিনকে বরণ করে নেয় নিজস্ব সাংষ্কৃতিক রীতি অনুসারে। সব জাতির সংষ্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নববর্ষেরপ্রথম দিনটি বরণের ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাসও রয়েছে। প্রাচীন আরবীয়রা ওকাবেরমেলা পালন করত, ইরানিরা নওরোজ উৎসব এবং প্রাচীন ভারতীয়রা দোলপূর্ণিমার দিন নববর্ষ উদযাপন করত। মেক্সিকোর নববর্ষের সূচনার সময়অর্থাৎ রাত ১২টা বাজার ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে কেউ যদি একটি করে আঙ্গুরখায়, প্রতিটি ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে নতুন বছর তাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবেবলে মনে করে।
চেরিফুলের দেশ জাপানেও নববর্ষে দরজার মুখে গলদা চিংড়ি, কাঁকড়া আরউজ্জ্বল রঙের ফল ঝুলিয়ে রাখা হয়। এর ফলে বাড়িতে সুখ নেমে আসবে এরকম ধারণা করা হয়। থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামেও নববর্ষে ধানের ছড়াঝুলিয়ে রাখা হয়। চীন ও বার্মায় নববর্ষের প্রথম দিন গাছ এবং পাহাড়েরচূড়ায় প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। প্রচার আছে, ভাগ্য ও ফসল ভালো হওয়ারজন্যই তারা এ কাজটি করেন।
বাংলার বর্ষবরণ
আমাদের দেশে গ্রামে বৈশাখ পালন হয় একটু ভিন্ন আমেজে, ভিন্ন ঢঙে। এই দিননগরজীবনে যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুনকাপড় পরার আয়োজনও। গ্রামবাংলায় সকালবেলা দই-চিঁড়া দিয়ে অতিথিআপ্যায়ন করার রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতারআনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানান। চট্টগ্রামেবৈশাখের প্রথম দিন আবদুল জব্বারের বলীখেলার রেওয়াজ রয়েছে।বৌদ্ধপ্রধান জেলাগুলো, যেমন কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ওখাগড়াছড়িতে বৈশাখে অনুষ্ঠিত হয় বিজু বা বিহু নামক উৎসব। এছাড়ানববর্ষের প্রথম দিন আমনি খাওয়ার রীতিও বহু দিন ধরে চলে আসছে। ষাটেরদশক থেকে রমনার বটমূলে রাজধানী ঢাকার ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানযেন নগরজীবনের উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সম্পর্কে ড.সন্জীদা খাতুন লিখেছেন, ‘...সিদ্ধান্ত হয়ে গেল, ঐখানেতেই (রমনার বটমূলে)ভোরবেলাতে পহেলা বৈশাখের সমাবেশ হবে। সেটা উনিশ শ’ আটষট্টি সাল।এর আগের সব পহেলা বৈশাখ হয়েছে ইংলিশ প্রিপারেটরি স্কূলের কৃষষ্ণচূড়াগাছের নিচে, সন্ধ্যাবেলায়। কে জানতো, আমরা নিজেরাও কি বুঝেছিলাম, কতবড় ঘটনার সূচনা হতে চলেছে সেদিন। বাঙালির উৎসব বলতে, ধর্মনিরপেক্ষসর্বজনের অনাবিল আনন্দের মিলনকেন্দ্র বলতে ওই বটমূল যে চিরকালীন মূল্যপেয়ে যাবে, অতটা আমরা বুঝিনি তখন।’ ১৯৮৯ সালে প্রথম ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট আয়োজন করে মঙ্গল শোভাযাত্রার।চারুকলার শিল্পীরা বাঘ, হাতি, ঘোড়া, বানর বিচিত্র রকম সাজে এবং নানারকম জীবজন্তুর মুখোশ নিয়ে এই শোভাযাত্রা করেন। এর ক্রমবিকাশ ঘটছেউত্তরোত্তর।
আমাদের দেশে গ্রামে বৈশাখ পালন হয় একটু ভিন্ন আমেজে, ভিন্ন ঢঙে। এই দিননগরজীবনে যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুনকাপড় পরার আয়োজনও। গ্রামবাংলায় সকালবেলা দই-চিঁড়া দিয়ে অতিথিআপ্যায়ন করার রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতারআনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানান। চট্টগ্রামেবৈশাখের প্রথম দিন আবদুল জব্বারের বলীখেলার রেওয়াজ রয়েছে।বৌদ্ধপ্রধান জেলাগুলো, যেমন কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ওখাগড়াছড়িতে বৈশাখে অনুষ্ঠিত হয় বিজু বা বিহু নামক উৎসব। এছাড়ানববর্ষের প্রথম দিন আমনি খাওয়ার রীতিও বহু দিন ধরে চলে আসছে। ষাটেরদশক থেকে রমনার বটমূলে রাজধানী ঢাকার ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানযেন নগরজীবনের উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সম্পর্কে ড.সন্জীদা খাতুন লিখেছেন, ‘...সিদ্ধান্ত হয়ে গেল, ঐখানেতেই (রমনার বটমূলে)ভোরবেলাতে পহেলা বৈশাখের সমাবেশ হবে। সেটা উনিশ শ’ আটষট্টি সাল।এর আগের সব পহেলা বৈশাখ হয়েছে ইংলিশ প্রিপারেটরি স্কূলের কৃষষ্ণচূড়াগাছের নিচে, সন্ধ্যাবেলায়। কে জানতো, আমরা নিজেরাও কি বুঝেছিলাম, কতবড় ঘটনার সূচনা হতে চলেছে সেদিন। বাঙালির উৎসব বলতে, ধর্মনিরপেক্ষসর্বজনের অনাবিল আনন্দের মিলনকেন্দ্র বলতে ওই বটমূল যে চিরকালীন মূল্যপেয়ে যাবে, অতটা আমরা বুঝিনি তখন।’ ১৯৮৯ সালে প্রথম ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট আয়োজন করে মঙ্গল শোভাযাত্রার।চারুকলার শিল্পীরা বাঘ, হাতি, ঘোড়া, বানর বিচিত্র রকম সাজে এবং নানারকম জীবজন্তুর মুখোশ নিয়ে এই শোভাযাত্রা করেন। এর ক্রমবিকাশ ঘটছেউত্তরোত্তর।
নববর্ষ উৎসবের একটি বড় অংশ বৈশাখী মেলা। সকাল থেকেই মেলা বসে। এইমেলা আবাল বৃদ্ধ বনিতার এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। এসব মেলায় মাটিরহাঁড়ি-পাতিল, পুতুল-ঘোড়া এবং কাঠ ও লোহার নানা রকম খেলনা পাওয়াযায়। দোলনা, পুতুল নাচ ইত্যাদি নানা রং-বেরঙের উৎসবে ভরে ওঠে শহরেরবৈশাখী মেলা। শিশু-কিশোরদের জন্য থাকে নানারকম খাবার। যেমন উড়কি,মুড়কি, বিন্নি ধানের খই, কদমা, বাতাসা, মুরালি, নাড়ূ, আরো কত কী! ইংরেজকবি এ.ই. হাউজম্যান-এর কবিতার অনুবাদে পাই ‘বাল্যে যখন মেলায়গিয়েছি/পকেটে পয়সা নাষ্টি/কিনি না কিছুই, শুধু চেয়ে থাকি/দুঃসহ সেইশাস্তি।/এখন সময় বদলে গিয়েছে/কিনে নিতে পারি ওইসব/পয়সাও আছে,মেলাও রয়েছে,/নেই শুধু শৈশব।’মেলা ছাড়াও হালখাতা নববর্ষের একটি সর্বজনীন অনুষ্ঠান। আজও ব্যবসায়ীরাজাঁকজমকে হালখাতা পালন করেন। জীবনের বিগত জীর্ণ খাতা বদলে ফেলেনতুন একটি খাতা খোলাই এর লক্ষ্য। হালখাতা নতুন বছরের হিসাবপাকাপাকিভাবে টুকে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার এ একআনুষ্ঠানিক উদ্যোগ। লেনদেন, বাকি-বকেয়া, উসুল আদায় সব হিসাব লিখেরাখা হয়।
কবি সৈয়দ শামসুল হক তার বৈশাখ কবিতায় লিখেছেন, ‘সারাদিন ইষ্টিশনেট্রেন পড়ে পড়ে,/পল্টুর দাদুর মতো ঝিমোয় রোদ্দুরে।’বাংলা নববর্ষ বাঙালির শ্রেষ্ঠ সর্বজনীন উৎসব, সব বয়সীদের এক মিলনমেলা।শাশ্বত সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। শত বাধা-বিপত্তি আরধর্মান্ধ-মৌলবাদীদের ছোবলও এর বিকাশ থামাতে পারেনি, কেড়ে নিতেপারেনি এর ঔজ্জ্বল্য। নববর্ষের সকালে রমনার বটমূল ওরা রক্তাক্ত করেছে,বোমা মেরে নিরীহ মানুষ হত্যা করে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে এ আর চলবে না।কিন্তু না, বাঙালির সাংষ্কৃতিক চেতনাকে তারা দমিয়ে রাখতে পারেনি, বরংআরো শানিত হয়েছে দৃঢ় প্রত্যয়ে। আমাদের অগ্রযাত্রার পথ আরো মসৃণ হোক,জয় হোক আমাদের সাংষ্কৃতিক এই পদযাত্রা।
No comments:
Post a Comment