Accounting

হিসাববিজ্ঞানে ভাল রেজাল্টে আগ্রহী
এস.এস.সি , এইচ.এস.সি ও অনার্সের হিসাববিজ্ঞান নিয়ে সমস্যা আছে...
দেরী না করে নিচের লিংকে ক্লিক কর

Honours & Masters Result

নিচের লিংকে ক্লিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট পেয়ে যাবে

রাশিফল জানতে চান?

তাহলে এখনি নিচের লিংকে ক্লিক করে আপনার রাশি সম্পর্কে জেনে নিন। ২০১২ সালটি আপনার কেমন যাবে জানতে এখনি ক্লিক করুণ.....

Monday, May 7, 2012

মৃত্যু নিয়ে রহস্য ঘনীভূত চট্টগ্রামে একই পরিবারের ৪ জনের আত্মহত্যা না হত্যা?


 
অবিশ্বাস থেকে সন্দেহ। অতঃপর স্ত্রী সন্তানকে হত্যার পর নিজের আত্মহত্যা। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার উত্তর ঘাটচেক এলাকায় গত শনিবার অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন নিহত পল্লীচিকিৎসক প্রকাশ বড়ুয়া ছাড়াও তার পরিবারের ৩ সদস্য। আর তার এ  মৃত্যুর বিষয়টিকে এভাবেই দেখছেন পরিবার ও আশপাশের লোকজন।

এ নিয়ে গতকাল থানায় একটি মামলা দায়ের হলেও রহস্য যেন কাটছে না। ঘটনাটির সঙ্গে পরিকল্পিত কোন প্ল্যান রয়েছে কিনা কেউ কেউ তা খতিয়ে দেখার দাবি করেন। অনেকে পারিবারিক শত্রুতা কিংবা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে ঘায়েল করার কথা জানান। ঘটনার পরপরই তার কক্ষের দরজা খোলা পাওয়া যায়। পাশাপাশি আত্মহত্যার পর সিলিং ফ্যান থেকে তার লাশ নামালো কে তা উদঘাটন করা যায়নি।
শুক্রবার রাতে প্রকাশ ও তার স্ত্রী নিজঘরে একসঙ্গে ছিলেন। তাদের দু’সন্তান ছিলেন পাশের জেঠার ঘরে। রাতের কোন এক সময়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন প্রকাশ। এরপর সন্তানরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাদের ঘরে এলে তাদেরও হত্যা করা হয়। সবাইকে মেরে ফেলার পর নিজে আত্মহত্যা করেন বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে।
বাধা উপেক্ষা করে প্রেম-বিয়ে:
আজ থেকে ১০ বছর আগে ধর্মীয় বাধা উপেক্ষা করে নিজেদের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেছিলেন প্রকাশ বড়ুয়া ও তার হিন্দু স্ত্রী রোজী। বোয়ালখালীর শাকপুরা গ্রামের অশোক দাশের কন্যা ছিলেন রোজী দাশ। ২০০০ সালে তাদের মধ্যে পূর্ব পরিচয় সূত্রে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্যদিকে রাঙ্গুনিয়ার সোনাইছড়ি গ্রামের হেমরঞ্জন বড়ুয়ার বড় ছেলে ছিলেন পল্লীচিকিৎসক প্রকাশ বড়ুয়া। বিয়ের আগে তাদের দুই পরিবারের কেউই এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। একপর্যায়ে পরিবার ও ধর্ম উপেক্ষা করে ৩ বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০২ সালে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন রোজী। এরপর পরিবারের অমতেই প্রকাশ বড়ুয়াকে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে করে রোজী দাশ থেকে হয়ে যান বড়ুয়া।
দুই পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিয়ের পরপরই তাদের সুখের সময় কাটেনি। দু’জনেই ঢাকায় পালিয়ে যান। সেখানে অবস্থান করেন দীর্ঘ তিন মাস। পরিবারের অমতে ভিন্ন ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করায় স্থানীয় সমাজের বসবাসরত লোকজন তাকে ভাল চোখে দেখেনি। নিজের পরিবারের কাছেও ছোট হয়ে থাকতেন প্রকাশ বড়ুয়া। একসময় তাদের কোল জুড়ে এলো পুত্র সীমান্ত (৮) ও কন্যা সোমা (৬)।
প্রকাশের ইচ্ছে ছিল ছেলেকে ডাক্তার ও মেয়েকে আইনজীবী বানাবেন। কিন্তু এরই মাঝে তৈরি হয় তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছিলেন না। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সবার সামনে ঝগড়া। দু’জনই একে অপরকে সন্দেহ করতে লাগলেন। বাড়তে থাকে অবিশ্বাস। আর সে অবিশ্বাস থেকে তাদের সাংসারিক জীবনের ১২ বছরের প্রেম-ভালবাসার সংসারের ইতি ঘটলো।
গত শুক্রবার গভীর রাতে প্রথমে স্ত্রী রোজী বড়ুয়াকে শ্বাসরোধ করা হয়। এরপর সকালে  ছেলে সীমান্ত ও সোমাকে একইভাবে হত্যা করেন প্রকাশ বড়ুয়া। তারপর গলায় রশি পেঁচিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে নিজে আত্মহত্যা করেন।
লাশের পাশে চিরকুট:
নিহত প্রকাশ বড়ুয়া আর তার পরিবারের লাশের পাশেই পাওয়া গেল একটি চিরকুট। ৬ পৃষ্ঠার এ চিরকুট ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। চিরকুটে প্রকাশ লিখেছিলেন ‘আমি প্রকাশ বড়ুয়া, নিজের হাতে লেখাগুলো পড়ে বিস্তারিত জেনে নেবেন। আমি আমার স্ত্রী এবং ছেলে ও মেয়েকে নাইলন দড়ি দিয়ে নিজের হাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে এক এক করে মা- ছেলে ও মেয়েকে খুন করেছি এবং একই দড়ি দিয়ে নিজেও ফাঁসিতে ঝুললাম। সবাইকে হত্যা করার সময় আমাকে কেউ সহযোগিতা করেনি। আমি একাই সব করেছি। আমি রোজীকে রাত ২টার সময় হত্যা করেছি। আর ছেলেমেয়ে সকালে পরে আমি। আমি রোজীর সাথে সংসার করেছি ১০ বছর। কিন্তু নয় বছর পর্যন্ত আমাদের সংসার ভালোই কেটেছে। দশ বছরের মাথায় আমরা দুই জনের মধ্যে শুধু ঝগড়া লেগেই থাকে। আমি ওকে ভালবেসে বিয়ে করেছি এবং খুব ভালবাসতাম। ও আমাকে ভালবেসে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। এবং বৌদ্ধ ধর্মের নিয়ম অনুসারে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। পরে কোর্ট ম্যারেজ করি। ওর কারণে আমি আত্মীয় স্বজনের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি। এর মধ্যে ও আমাকে বলেছে তুমি তোমার আত্মীয় স্বজনেরগুলো করবে, আমি তোমার কোন আত্মীয়ের বিয়েতে যাব না। তখন আমি বললাম, তোমার যদি ভালো না লাগে তাহলে ছেলেমেয়েগুলো নিয়ে তোমার যেখানে ভালো যাও। তখন ও বলল, আমি তোর কথা মতো চলব না, আমি আমার মতো চলবো। আমি বললাম, আমি স্বামী হিসেবে আমাকে কোন কর্তব্য মনে করবে না, সেটা আমি মানতে রাজি নই। আমার ঘরে থাকলে আমার কথা মতো চলতে হবে। হোসেন জমিদারকে চলতি দোকানের এডভান্স বাবদ জমা দিয়েছি ৩০ হাজার টাকা, আগের ৩ হাজার মোট ৩৩ হাজার টাকা পাব।’
পরিবারের লোকজন যা বললেন:
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও সিঅ্যান্ডবি এলাকায় প্রকাশ বড়ুয়া ও তার শ্যালক বাপ্পার যৌথ মালিকানায় রয়েছে একটি ওষুধের দোকান। এ প্রসঙ্গে বাপ্পা বলেন, ‘যে চিঠিটি উদ্ধার করা হয়েছে তা দুলাভাইয়ের নিজের হাতে লেখা। কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরে তার সঙ্গে আপার বনিবনা না হওয়ার বিষয়টি টের পাচ্ছিলাম। তিনি কাজে মনোযোগ দিতে পারছিলেন না।’
প্রকাশ বড়ুয়ার বোন শুক্লা বড়ুয়া বলেন, ‘দাদা কেন এই কাজ করতে গেলেন তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। বৌদিকে তিনি নিজে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন। অথচ তারা দু’জনেই চলে গেলেন সবাইকে কাঁদিয়ে। এর পেছনে কোন কারণ থাকবে তা আমি ভাবতে পারছি না।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘সকাল সোয়া ৬টায় ও সোয়া ৯টার দিকে দাদার সঙ্গে দু’দফা মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। এ সময় তিনি জানিয়েছিলেন  ‘বোন, আমি তো স্বর্গে চলে যাচ্ছি। তোর সাথে হয়তো আর দেখা হবে না।’
বাড়ির গৃহশিক্ষক চম্পা দে বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি তার দু’সন্তানকে পড়াতে গেলে তিনি আমাকে চলে যেতে বলেন। জানান, তারা আজ পড়বে না। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন অসুস্থ।’
রহস্য কাটছে না:
এদিকে ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ সোনাইছড়ি গ্রামে ভিড় জমিয়েছেন। পারিবারিক কলহের কারণে এ হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক অনুমান করা হলেও এলাকার কেউ কেউ জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। ভেতরে স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন এমন অনুমান করা হলেও ঘরের দরজা কারা খুলেছেন? তা জানা যায়নি এখনও। গভীর রাতে স্ত্রীকে হত্যার সময় কোন ধরনের শব্দ পেলেন না পাশের ঘরের কোন লোকজন। দু’সন্তানকে অনেক সকালে হত্যা করা হয়েছিল। দরজা খোলা থাকার পর মায়ের কক্ষে ঢুকে সে সন্তানরা আবার ফিরে যায়। তাদের কাছ থেকে কেউ কি কিছু জেনেছিলেন? পাশাপাশি দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করার সময় কোন চিৎকার হয়েছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে স্থানীয় পুলিশ।
স্থানীয় পুলিশের এক এসআই জানান, ঘরের চালা এতটাই নিচু যে রশিতে ঝুলে ফাঁস দেয়ার মতো কোথাও কোন সুযোগ নেই। তাহলে নিহত প্রকাশ কোথায় ঝুলে গলায় ফাঁস দিয়েছে? রশিতে ঝুলে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেলে তার লাশ নিচে নামালো কারা। তারা কি বাড়ির কেউ না বাইরের লোকজন।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি এম এম মোর্শেদ মানবজমিনকে বলেন, ‘নিহত প্রকাশ বড়ুয়ার একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুর বিষয়টি সত্যিই রহস্যজনক। প্রথমদিকে আমরা সবাই একে আত্মহত্যা মনে করলেও পরে বিষয়টির পেছনে অন্য কোন ঘটনা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছি। অনেকগুলো প্রশ্ন এখানে ঘুরপাক খাচ্ছে। আশা করছি প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে পারবো।’

মহিউদ্দীন জুয়েল, চট্টগ্রাম থেকে: বিডিনিউজ২৪.কম, ০৭/০৫/২০১২

No comments:

Post a Comment