Accounting

হিসাববিজ্ঞানে ভাল রেজাল্টে আগ্রহী
এস.এস.সি , এইচ.এস.সি ও অনার্সের হিসাববিজ্ঞান নিয়ে সমস্যা আছে...
দেরী না করে নিচের লিংকে ক্লিক কর

Honours & Masters Result

নিচের লিংকে ক্লিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট পেয়ে যাবে

রাশিফল জানতে চান?

তাহলে এখনি নিচের লিংকে ক্লিক করে আপনার রাশি সম্পর্কে জেনে নিন। ২০১২ সালটি আপনার কেমন যাবে জানতে এখনি ক্লিক করুণ.....

Thursday, May 10, 2012

কবে আসবে এইডসের টিকা

এইচআইভি ভাইরাসের কারণে শরীরে বাসা বাঁধে মরণ ব্যাধি এইডস। ভয়ংকর রহস্যময় এই এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস করে ফেলে। এতে খুব সহজেই যেকোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় শরীর। প্রায় তিন দশক ধরে গবেষকেরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বা টিকা তৈরিতে গবেষণা করে আসছেন। কিন্তু সাফল্য এখনো অধরাই রয়ে গেছে। সম্প্রতি গবেষকদের এ ব্যর্থতার কারণ নিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

 

গবেষকদের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা এইডসের ঝুঁকির মধ্যে বাস করছি। এইচআইভি সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু এইডস হয় না। গঠনে স্নেহপদার্থের আবরণ থাকায় এইচআইভি অত্যন্ত ভঙ্গুর। ভাইরাসটি শরীরের বাইরে বেশিক্ষণ বাঁচেও না। শারীরিক সংসর্গ বা রক্তের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। স্পর্শ, একই পোশাক পরিধান বা মশার কামড়ে এইচআইভি ছড়ায় না। এটি ছোঁয়াচেও নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার অব ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ১৯৮১ সালে রহস্যময় উপসর্গকে চিহ্নিত করে এর নাম দেয় এইডস। ১৯৮৪ সালে ২৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস মার্গারেট হেকলার ঘোষণা করেন যে গবেষকেরা এইডসের সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করতে পেরেছেন। এইডসের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে তিনি এইচআইভি ভাইরাসটির নাম বলেন। তাঁর এই ধারণা ঠিক ছিল। তিনি সে সময় ঘোষণা করেছিলেন, এইডসের টিকা দুই বছরের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করা শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁর ধারণা বাস্তবের সঙ্গে মেলেনি। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর পেরিয়ে গেছে। গবেষকেরা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে গেছেন। দীর্ঘ ২৮ বছর গবেষণা করেও গবেষকেরা এইচআইভির প্রতিরোধক কোনো টিকা উদ্ভাবন করতে পারেননি। এর মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এইচআইভির টিকা তৈরিতে ব্যর্থতার কারণ, এইচআইভি ভাইরাসের জটিলতা। গবেষকদের মতে, এই ভাইরাসটি সাধারণ কোনো ভাইরাসের মতো নয়। এইচআইভি ভাইরাস জটিল আর এর কার্যক্ষমতাও বহুমুখী। এই ভাইরাস খুব দ্রুত মিউটেট বা বিভাজিত হয়। দ্রুত বিভাজিত হয়ে ভাইরাসগুলো তাদের কোটি কোটি সংস্করণ তৈরি করে ফেলে জটিল থেকে আরও জটিলতর রূপ নেয়। শরীরে প্রবেশ করার মাত্র মাসখানেকের মধ্যেই তাদের রূপ বদলে ফেলে। গবেষকেরা তাই ধারণা করেন, ছদ্মবেশী এই ভাইরাসটিকে দশটা সাধারণ ফ্লু ভাইরাসের মতো সহজেই টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভবপর নয়। গবেষকদের মতে, সাধারণ ভাইরাসের নির্দিষ্ট কিছু সংস্করণের জন্য টিকা কার্যকর হতে পারে কিন্তু অসংখ্য ছদ্মবেশী ও জটিল এইচআইভি ভাইরাসকে টিকা দিয়ে আটকানো দুঃসাধ্য। বেশির ভাগ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিই কোনো লক্ষণ ছাড়া শরীরে এই রোগ বহন করে। তবে কখনো কখনো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ছয় থেকে সাত সপ্তাহ পরে কিছু অনির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। এসব লক্ষণ কোনো রকম চিকিত্সা ছাড়াই সেরে যায়, ফলে পরীক্ষা ছাড়া এই ভাইরাসটির অস্তিত্ব গোপন থেকে যায়। লক্ষণ ছাড়াই সর্বোচ্চ ১০ বছর এইচআইভি ভাইরাস মানুষের শরীরে অলক্ষ্যে নির্জীব থেকে যায়। এ কারণে গবেষকেরা ধারণা করেন, এইচআইভি ভাইরাসটি জটিলতম ভাইরাস।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের (এনআইএআইডি) টিকা গবেষক গ্যারি ন্যাবেল জানিয়েছেন, ‘সব ধরনের টিকা নির্দিষ্ট কিছু ভাইরাসের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে। টিকার কাজ হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলা অর্থাত্ প্রশিক্ষণ দেওয়া যা নির্দিষ্ট কিছু ভাইরাসকে শনাক্ত করতে পারে এবং এসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। আক্রমণকারী ভাইরাসকে অকেজো করে দেয় টিকা। কিন্তু এইচআইভি ভাইরাস হচ্ছে ছদ্মবেশী ভাইরাস। এই ভাইরাস মানুষের শরীরের কোষের সঙ্গে আটকে থাকা জিপি ১২০ নামের প্রোটিনের ওপর হামলা চালায়। জিপি ১২০ প্রোটিন ক্রমাগত আকার পরিবর্তন করতে সক্ষম, ফলে এই প্রোটিনের আড়ালে ঢুকে পড়া এইচআইভি ভাইরাসকে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। এটি তখন তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং চিনির অণুর আড়ালে আশ্রয় নেয়। ফলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আড়ালে চলে যায়। এ ছাড়াও এইচআইভি ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোতে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে ও রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে মেরে ফেলে। এ ছাড়া বছরের পর বছর ধরে রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোর ডিএনএতে আস্তানা গেড়ে এই কোষের ডিএনএতে ছড়িয়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি এইডস রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। তাই এইচআইভি ভাইরাসের জন্য টিকা তৈরির বিষয়টি প্রতিরক্ষা শিল্ড নিয়ে আটকে রাখা লক্ষাধিক সেনার কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে রাইফেলের একটা গুলি চালানোর মতোই ঘটনা।’
জটিল রহস্যময় এই ভাইরাসটি নিয়ে গবেষকেরা অবশ্য বর্তমানে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। বিবিসি জানিয়েছে, এইচআইভি প্রতিরোধের জন্য প্রকৃতির কাছে ফিরছেন গবেষকেরা। প্রকৃতি যেভাবে মানুষের শরীরের কোনো জটিল রোগকে সারিয়ে তুলতে পারে তা থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজছেন বর্তমান সময়ের এইচআইভি টিকা গবেষকেরা। টিকা গবেষক অ্যান্থনি ফোস জানিয়েছেন, প্রকৃতিতে থাকা প্রতিটি জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিকভাবেই সেরে উঠেছে। শরীর নিজে থেকেই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রকৃতি থেকে ফিরে পায়। তবে এইচআইভির ক্ষেত্রে বাস্তবতা ভিন্ন। দীর্ঘ সময়ের পরও এখনো হতাশার কথাই বলা হচ্ছে। কারণ, বর্তমানে প্রায় তিন কোটি মানুষ তাদের শরীরে এই ভাইরাস বহন করছেন। কিন্তু এখনো কারও দেহ থেকে এই ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল করা গেছে এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত গবেষকদের হাতে নেই। অবশ্য কিছু মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এই ভাইরাসটি হয়তো নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু এ ভাইরাসটি থেকে কেউ সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে না। এইচআইভির টিকা তৈরির ক্ষেত্রে এটা একটা বড় অন্তরায়।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, এখন পর্যন্ত মাত্র তিন ধরনের টিকা তৈরি করতে পেরেছেন গবেষকেরা। এই তিন ধরনের টিকা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। একটি হচ্ছে ‘এইডস ভিএএক্স’। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই টিকা এইচআইভির বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এরপর এসেছে ‘ভি ৫২০’। এই টিকা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে সবচেয়ে খারাপ ফল বয়ে আনে। এ ছাড়া ‘টি-সেল’ নামে একটি টিকা পরীক্ষা করেছেন গবেষকেরা। কিন্তু টিকাটি এই পরীক্ষামূলক পর্যায় পেরোতে ব্যর্থ হয়েছে। গবেষকেরা হতাশ হয়ে পরে টিকা তৈরির এ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। কারণ, তাঁরা স্বীকার করে নিয়েছেন, যাঁরা টিকা নিচ্ছিলেন তাঁদের অবস্থা আরও সঙ্গিন হয়ে পড়ছিল। অবশ্য এর কারণ গবেষকদের কাছে শেষ পর্যন্ত অজানাই থেকে গেছে।
টিকা তৈরির ক্ষেত্রে গবেষকেরা কিছুটা আশার আলো দেখতে পান ২০০৯ সালে এসে। এ সময় গবেষকেরা তিনটি এইচআইভি জিনবিশিষ্ট একটি পাখির ভাইরাস এবং এইডস ভিএএক্স ভাইরাসের মিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন টিকা উদ্ভাবন করেন। এই টিকা পরীক্ষা করতে থাইল্যান্ডে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করেন। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় ফলাফল ছিল হতাশাজনক। গবেষকেরা এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। কিন্তু এ গবেষণা থেকে তাঁরা ৩১ শতাংশ সফলতার দাবি করেন। তাঁদের অনুকূলে আসা ৩১ শতাংশ সাফল্য আশাব্যঞ্জক হলেও টিকা হিসেবে ব্যবহারের মতো সন্তোষজনক নয় বলেই তাঁরা মেনে নেন এ জন্য যে মাত্র ৩১ শতাংশ কার্যকারিতা টিকা হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে না। উল্লেখ্য, পোলিও টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকর।
অবশ্য ২০১০ সালে এসে গবেষকেরা কিছুটা সাফল্য পান। টিকার মিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন টিকা তৈরি ও পরীক্ষা করে তাঁরা কিছুটা সফলও হন। তবে, এই টিকাও এইচআইভির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারা বা কার্যকরী ভূমিকা রাখার মতো কোনো সাফল্য আনতে পারেনি। তাই গবেষকেরা এরপর টিকার অকার্যকারিতার কারণ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ইন্টারন্যাশনাল এইডস ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভের গবেষক ওয়েন কোফ জানিয়েছেন, টিকা পরীক্ষা করার বিষয়টি বর্তমানে নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের শরীরে এমন অ্যান্টিবডি তৈরির কাজ চলছে, যা এইচআইভি ভাইরাসের বিভিন্ন স্তরেই কাজ করতে পারে।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, গবেষকদের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাসের মিশ্রণে তৈরি সুপার অ্যান্টিবডি এইচআইভি ভাইরাসের বিভিন্ন অংশে আঘাত করা ও ভাইরাস ছড়ানোর পথ রুদ্ধ করতে সক্ষম। গবেষকেরা তাঁদের উদ্ভাবিত এই টিকা ২০১৩ সাল থেকে পরীক্ষা করা শুরু করবেন। তাঁরা আশা করছেন, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই তাঁরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হবেন।
ঠিক কবে নাগাদ এই এইডস প্রতিষেধক উদ্ভাবনে সাফল্য আসবে বা আদৌ তা আসবে কি না, এ নিয়ে সংশয় থাকলেও এই টিকার প্রয়োজনীয়তার কথা একবাক্যে সব গবেষকই স্বীকার করে নিয়েছেন। অবশ্য তাঁরা এইচআইভি প্রতিরোধের অন্য উপায়গুলোর প্রতিও জোর দিচ্ছেন। জন্মনিরোধক ব্যবহার, অন্যের রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আগে রক্তে এইচআইভি আছে কি না পরীক্ষা করে নেওয়া, ইনজেকশন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার করা, অনিরাপদ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা এবং আক্রান্ত হলে দেরি না করে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ‘আমাদের হাতে প্রতিরোধের যে উপায়গুলো রয়েছে সেগুলোর ব্যবহার করে আমার এইচআইভি থেকে রক্ষা পেতে পারি। তার পরও টিকার গুরুত্ব অপরিসীম।’
টিকার জন্য অপেক্ষা-হতাশা যতটা বেড়েছে—টিকার প্রয়োজনীয়তাও ততটাই বেড়েছে। এইচআইভি ভাইরাসকে জানতেই গবেষকেরা এত দীর্ঘ সময় পার করেছেন। তবে হয়তো আরও সময় লাগতে পারে। যেমন পোলিও ভাইরাস শনাক্তের পরও পোলিও টিকা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ৪৭ বছর লেগেছিল, হেপাটাইটিস বির ক্ষেত্রে ব্যয় হয়েছে ১৬ বছর, সেই তুলনায় এইচআইভির মতো ভাইরাসের ক্ষেত্রে ২৮ বছর পার হয়েছে। তাই এইচআইভির টিকা কবে সহজলভ্য হবে সে বিষয়ে এখনই কোনো আশার কথা শোনাতে পারছেন না গবেষকেরা।

সূত্র: প্রথমআলো.কম,10/05/2012

No comments:

Post a Comment