Accounting

হিসাববিজ্ঞানে ভাল রেজাল্টে আগ্রহী
এস.এস.সি , এইচ.এস.সি ও অনার্সের হিসাববিজ্ঞান নিয়ে সমস্যা আছে...
দেরী না করে নিচের লিংকে ক্লিক কর

Honours & Masters Result

নিচের লিংকে ক্লিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট পেয়ে যাবে

রাশিফল জানতে চান?

তাহলে এখনি নিচের লিংকে ক্লিক করে আপনার রাশি সম্পর্কে জেনে নিন। ২০১২ সালটি আপনার কেমন যাবে জানতে এখনি ক্লিক করুণ.....

Thursday, May 10, 2012

সিলেটে পাশবিক নির্যাতন করে যুবককে হত্যা

মির্জা মোহাম্মদ ফয়েজ মির্জা মোহাম্মদ ফয়েজ
কইমু কইমু, সব কইমু। আগে আমারে এক গ্লাস পানি খাওয়াইন!’ ডান হাত ও ডান পা থেঁতলানো অবস্থায় গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এভাবেই অস্ফুটস্বরে কথা বলছিলেন যুবকটি। এক গ্লাস পানি খাওয়ার পর মিনিট দশেক কথা বলেন। বর্ণনা দেন ‘চোর’ সন্দেহে তাঁকে আটকের পর প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চালানো পাশবিক নির্যাতনের।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মৃত্যু হয় হতভাগ্য যুবকটির। নাম তাঁর মির্জা মোহাম্মদ ফয়েজ (২৮)। তিনি সিলেট নগরের আম্বরখানার চন্দনটুলা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
চার ভাইয়ের পরিবারে ফয়েজ ছিলেন দ্বিতীয়। আম্বরখানায় ‘ক্ল্যাসিক কালার প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং’ নামে তাঁদের একটি ছাপাখানা রয়েছে। সেখানে নিয়মিত বসতেন ফয়েজ।
গতকাল সকালে ‘চোর’ সন্দেহে আটকের পর সিলেট নগরের পশ্চিম পাঠানটুলা এলাকার একটি বাড়িতে তাঁর ওপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়। হত্যার অভিযোগে পুলিশ বাড়ির মালিক আফরোজ মিয়া (৪২) এবং ওই বাড়ির মেসে বসবাসকারী সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জুবেল আহমদ (২০), জয়নুল করিম (২০) ও সিলেট মদনমোহন কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান আহমদকে (২২) আটক করে।
ঘটনা সম্পর্কে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম পাঠানটুলার নিকুঞ্জ-৩ আবাসিক এলাকায় ছয়তলাবিশিষ্ট ‘আল-আফরোজ টাওয়ার’ মেসবাড়ি হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। চারতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন বাড়ির মালিক আফরোজ মিয়া। গতকাল সকাল আটটার দিকে ‘চোর’ সন্দেহে ফয়েজকে আটক করেন আফরোজ। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর ফয়েজকে বাড়ির নিচতলায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে ওই সময় আল-আফরোজ টাওয়ারে গেলে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক ও প্রতিবেশীদের সামনে ফয়েজ অস্ফুট স্বরে ঘটনার বর্ণনা দেন। ফয়েজ জানান, তাঁকে একটি ল্যাপটপ ও আইফোন চুরির অভিযোগে আটক করে ছয়তলার একটি কক্ষে নেওয়া হয়। বাড়ির মালিকসহ আরও তিনজন যুবক তাঁর হাত ও পা বেঁধে ডান হাতের দুটো নখ উপড়ে ফেলেন এবং কনুইয়ে ইটের টুকরা দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় ফয়েজ চিৎকার করলে পরনের শার্ট তাঁর মুখে গুঁজে ডান পায়ের হাঁটুতে রড দিয়ে পেটাতে থাকেন। ফয়েজ ‘পানি পানি’ বলে চিৎকার করলেও কেউ পানি খাওয়ায়নি।
সকাল প্রায় আটটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এভাবেই ফয়েজের ওপর অকথ্য পাশবিক নির্যাতন চলে। একসময় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। চেতনা ফিরলে দেখেন, মেঝেতে পড়ে আছেন। ফয়েজ বলেন, ‘বাড়ির মালিক কইছন আমি চুরি করার লাগি আইছি। আমি একজনের লগে দেখা করাত আইছিলাম। তাঁরারে আমি কইছি—চোর অইলে পুলিশে দেও...মাইরো না! কেউ আমার কথা হুনল না...!’
এ বর্ণনা দেওয়ার পর ফয়েজ পানি খেতে চাইলে পানি দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ মো. মুবাশ্বিরের নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে ফয়েজকে উদ্ধার করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে পুলিশের টেম্পোতে তোলা হয়।
এসআই শাহ মুবাশ্বির প্রথম আলোকে বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা অবস্থায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফয়েজের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ফয়েজের ভাই মির্জা আলী আহমদ কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মুবাশ্বির বলেন, বাড়ির মালিক আফরোজ ফয়েজকে চোর বলে অভিযুক্ত করলেও তিনি চিহ্নিত কোনো অপরাধী নন। তাঁর বিরুদ্ধে কোতোয়ালিসহ বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে কোনো মামলাও পাওয়া যায়নি।
সুরতহাল প্রতিবেদনে নির্যাতনের তথ্য: ফয়েজের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন এসআই মুবাশ্বির। তাঁর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ফয়েজের ডান হাতের কনুই ও ডান পায়ের হাঁটু থেঁতলানো। দুই হাতে, বুকে, পেটে ও কোমরে খুন্তির ছ্যাঁকার একাধিক ক্ষতচিহ্ন, মলদ্বারে পোড়া ক্ষত এবং রক্তক্ষরণের চিহ্ন, মুখের ডান দিকের দাঁত ভাঙা, ডান হাতের দুটো আঙুলের নখ উপড়ানো দেখা গেছে।
অন্য কোনো কারণ: ‘আমার ভাইরে মারতে মারতে মারি লাইছইন...’ বলে গতকাল দুপুরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে কাঁদছিলেন ফয়েজের বড় ভাই মির্জা আলী আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের চুরি করার কী দরকার। পারিবারিকভাবে আমাদের অনেক কিছু আছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।’
আলী আহমদ বলেন, ফয়েজ গতকাল সকালে তাঁর মোটরসাইকেল নিয়ে ছাপাখানায় যান। কিন্তু তিনি ছাপাখানায় গিয়ে ফয়েজকে পাননি। বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশের ফোন পেয়ে তিনি হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।
আফরোজের ভাষ্য: ফয়েজকে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় বাড়ির মালিক আফরোজ হাতেনাতে চোর ধরেছেন বলে জানান। ফয়েজকে পুলিশে না দিয়ে নির্যাতন প্রসঙ্গে আফরোজ দাবি করেন, ‘আমার এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা থাকেন। প্রায় সময় ছাত্রদের মূল্যবান জিনিস চুরি হয়। আজ (গতকাল) হাতেনাতে ধরা পড়ায় উত্তেজনার বশে কিছু মারধর করলেও আসলে সে (ফয়েজ) পালাতে গিয়ে এ রকম অবস্থা হয়েছে।’
সকাল আটটায় ধরে সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশে হস্তান্তর করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আফরোজ কোনো কথা না বলে বাড়ির ভেতরে ঢুকে ফটকে তালা দেন।
সূত্র: প্রথমআলো.কম, 10/05/2012

No comments:

Post a Comment