মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন
মানব পাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং জরিমানা পাঁচ লাখ টাকার বিধান রেখে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১১’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য জানান।
তথ্যসচিব মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন সম্পর্কে বলেন, এ আইনে সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয়েছে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। কেননা, মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ঘৃণিত একটি বিষয়। এটা প্রতিরোধ করার জন্য দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ রয়েছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। এ ব্যাপারে সঠিক আইনও দেশে নেই। তাই আইনটি প্রণয়ন করা হয়।
সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী মানব পাচারকারীকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাসহ অন্যূন ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। আর কোনো ব্যক্তি মানব পাচারে উৎসাহ বা নিজের সম্পত্তি ব্যবহার করার সুযোগ দিলে, তাকে আট বছর কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। আইনে দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে প্রতি জেলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করার ব্যবস্থা রয়েছে।
খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনো সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী মানব পাচারে জড়িত থাকলে এর প্রত্যেক সদস্যকে ১৪ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। প্রতারণা, প্রলোভন বা জবরদস্তির মাধ্যমে কাউকে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করলে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া কেউ কোনো নবজাত শিশুকে হাসপাতাল, সেবাসদন, শিশুসদন বা ওই নবজাত শিশুর পিতা-মাতার হেফাজত থেকে চুরি করলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা জরিমানাসহ ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। কোনো ব্যক্তি পতিতালয় স্থাপন বা পরিচালনা করলে তাকে দুই থেকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হবে। কোনো বাড়ির মালিক, ইজারাদাতা বা ইজারাদাতার প্রতিনিধি বাড়ির অংশবিশেষ পতিতালয় হিসেবে ব্যবহূত হবে জেনেও ভাড়া দিলে সেই ব্যক্তিকেও কমপক্ষে দুই বছর এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া বৈঠকে নাগরিকত্ব প্রদান, বাতিল ও নিয়ন্ত্রণসংবলিত বাংলাদেশ নাগরিত্ব আইন ২০১১-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে দেশে নাগরিকত্ব দেওয়া বা বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ১৯৭২ সালের একটি আইন রয়েছে, যা খুবই সংক্ষিপ্ত। এতে অনেক বিষয় উল্লেখ নেই। এ জন্য নতুন করে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন-২০১১-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদের ২০১২ সালের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়াও অনুমোদন পেয়েছে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা-সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তথ্যসচিব এ সম্পর্কে বলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ২০ এপ্রিল ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেন। পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ আইনটি তৈরি করা হয়।
১২৪ বিদেশি নাগরিককে সম্মাননা দেওয়া হবে: প্রেসসচিব জানান, মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় সম্মাননার জন্য ১২৪ জন বিদেশি নাগরিকের নাম মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা ‘খসড়া শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিং বিধিমালা’ প্রণয়নেরও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্র: প্রথমআলো.কম
No comments:
Post a Comment