দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও কালো টাকার মালিকদের মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির দাবিতে ভারতের যোগগুরু স্বামী রামদেব গতকাল শনিবার সকাল থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। রাজধানী নয়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে এ কর্মসূচি শুরু হয়। রামদেবের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তাঁর কয়েক হাজার অনুসারী। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেত্রী সাধ্বী ঋতাম্ভরাসহ শিখ, জৈন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক ধর্মীয় নেতাও অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
দুর্নীতি রোধে সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি পেশ
করেছেন রামদেব। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জলখাবার স্পর্শ করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিদেশি ব্যাংকে ভারতীয়দের গচ্ছিত কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা, কালো টাকা উদ্ধারের জন্য বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করা, কালো টাকার লেনদেন ঠেকাতে বাজার থেকে ৫০০ ও এক হাজার রুপির নোট তুলে নেওয়া, দ্রব্যমূল্য রোধ, কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো, ভূমি অধিগ্রহণ নীতি পরিবর্তন, দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়া ইত্যাদি। রামদেব বলছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের কোনো ধর্ম নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত সব মন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।
গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিবালসহ কংগ্রেস নেতারা রামদেবের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে এ কর্মসূচি প্রত্যাহারে তাঁকে রাজি করাতে ব্যর্থ হন। গতকাল ভোর সাড়ে চারটার দিকে রামলীলা ময়দানে যান রামদেব। অনশন শুরুর আগে সেখানে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার অনুসারীকে প্রথমে যোগব্যায়ামের অনুশীলন করান। সেখানে ভজন গান পরিবেশন করা হয়। এ সময় ভক্তদের উদ্দেশে রামদেব বলেন, ‘কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, সবই সম্ভব। আমরা এ আন্দোলনে পরাজিত হব না। দেশকে দুর্নীতি থেকে রক্ষাসহ দরিদ্র মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতেই এ কর্মসূচি।’ একই দাবিতে রামদেবের অনুসারীরা ওডিশা রাজ্য ও মুম্বাই শহরেও অনশন শুরু করেছেন।
রামদেবের অনুসারী ও পাঞ্জাবের সরকারি চাকুরে বলবিন্দর সিং বলেন, ‘সেই ১৯৪৭ সাল থেকে আমাদের নেতারা ব্যর্থ হয়ে আসছেন। তাঁরা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এখনো দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছি। গুটিকয়েক ব্যক্তি ধনী হয়েছেন।’
রামদেবের এই কর্মসূচি ভারতের বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোয় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। অনশন মাঠে বিশাল টেলিভিশন স্ক্রিনে রামদেবের যোগব্যায়াম অনুশীলন ও বক্তৃতা প্রচার করা হয়। অনশনে অংশ নেওয়া লোকজন দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন।
রামদেবের এ অনশন কর্মসূচির নিন্দা জানিয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিং। তিনি বলেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) ও ভিএইচপির পৃষ্ঠপোষকতায় এ কর্মসূচি চলছে। এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের দৃষ্টি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের সন্ত্রাস থেকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। গতকাল নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দিগ্বিজয় সিং বলেন, রামদেবের এ কর্মসূচির কারণ এখন একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আরএসএস বিজেপি ও ভিএইচপি প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে তাঁকে। দিগ্বিজয় অভিযোগ করেন, এ ধরনের অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিতে জনগণকে উৎসাহ দিয়ে রামদেব দেশের সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের সর্বনাশ করতে চান।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া রামদেব যোগব্যায়াম শিখিয়ে ভারতে লাখ লাখ ভক্ত তৈরি করেছেন। টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় তাঁর যোগব্যায়াম অনুশীলনের অনুষ্ঠান। কোটি কোটি দর্শক নিয়মিত তাঁর অনুষ্ঠান দেখেন। তিনি নিজের বিমানে চলাফেরা করেন। স্কটল্যান্ডে ‘পিস’ নামে একটি দ্বীপেরও মালিক রামদেব।
রামদেবের সমালোচকেরা বলছেন, জেট বিমানে চড়ে যে ব্যক্তি চলাচল করেন, এ আবার তাঁর কেমন অনশন! তাঁকে বহু কোটি টাকার শামিয়ানা খাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের সযোগ-সুবিধা রয়েছে সেখানে।
বিভিন্ন সমাজকর্মী বলছেন, রামদেব আগে তাঁর সম্পত্তির হিসাব ঘোষণা করুন, তারপর দুর্নীতির বিরুদ্ধে নামুন।
এএফপি, রয়টার্স ও পিটিআই অনলাইন
সূত্র: প্রথম আলো, ০৫/০৬/২০১১ইং, রবিবার
দুর্নীতি রোধে সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি পেশ
করেছেন রামদেব। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জলখাবার স্পর্শ করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিদেশি ব্যাংকে ভারতীয়দের গচ্ছিত কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা, কালো টাকা উদ্ধারের জন্য বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করা, কালো টাকার লেনদেন ঠেকাতে বাজার থেকে ৫০০ ও এক হাজার রুপির নোট তুলে নেওয়া, দ্রব্যমূল্য রোধ, কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো, ভূমি অধিগ্রহণ নীতি পরিবর্তন, দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়া ইত্যাদি। রামদেব বলছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের কোনো ধর্ম নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত সব মন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।
গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিবালসহ কংগ্রেস নেতারা রামদেবের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে এ কর্মসূচি প্রত্যাহারে তাঁকে রাজি করাতে ব্যর্থ হন। গতকাল ভোর সাড়ে চারটার দিকে রামলীলা ময়দানে যান রামদেব। অনশন শুরুর আগে সেখানে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার অনুসারীকে প্রথমে যোগব্যায়ামের অনুশীলন করান। সেখানে ভজন গান পরিবেশন করা হয়। এ সময় ভক্তদের উদ্দেশে রামদেব বলেন, ‘কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, সবই সম্ভব। আমরা এ আন্দোলনে পরাজিত হব না। দেশকে দুর্নীতি থেকে রক্ষাসহ দরিদ্র মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতেই এ কর্মসূচি।’ একই দাবিতে রামদেবের অনুসারীরা ওডিশা রাজ্য ও মুম্বাই শহরেও অনশন শুরু করেছেন।
রামদেবের অনুসারী ও পাঞ্জাবের সরকারি চাকুরে বলবিন্দর সিং বলেন, ‘সেই ১৯৪৭ সাল থেকে আমাদের নেতারা ব্যর্থ হয়ে আসছেন। তাঁরা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এখনো দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছি। গুটিকয়েক ব্যক্তি ধনী হয়েছেন।’
রামদেবের এই কর্মসূচি ভারতের বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোয় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। অনশন মাঠে বিশাল টেলিভিশন স্ক্রিনে রামদেবের যোগব্যায়াম অনুশীলন ও বক্তৃতা প্রচার করা হয়। অনশনে অংশ নেওয়া লোকজন দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন।
রামদেবের এ অনশন কর্মসূচির নিন্দা জানিয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিং। তিনি বলেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) ও ভিএইচপির পৃষ্ঠপোষকতায় এ কর্মসূচি চলছে। এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের দৃষ্টি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের সন্ত্রাস থেকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। গতকাল নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দিগ্বিজয় সিং বলেন, রামদেবের এ কর্মসূচির কারণ এখন একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আরএসএস বিজেপি ও ভিএইচপি প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে তাঁকে। দিগ্বিজয় অভিযোগ করেন, এ ধরনের অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিতে জনগণকে উৎসাহ দিয়ে রামদেব দেশের সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের সর্বনাশ করতে চান।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া রামদেব যোগব্যায়াম শিখিয়ে ভারতে লাখ লাখ ভক্ত তৈরি করেছেন। টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় তাঁর যোগব্যায়াম অনুশীলনের অনুষ্ঠান। কোটি কোটি দর্শক নিয়মিত তাঁর অনুষ্ঠান দেখেন। তিনি নিজের বিমানে চলাফেরা করেন। স্কটল্যান্ডে ‘পিস’ নামে একটি দ্বীপেরও মালিক রামদেব।
রামদেবের সমালোচকেরা বলছেন, জেট বিমানে চড়ে যে ব্যক্তি চলাচল করেন, এ আবার তাঁর কেমন অনশন! তাঁকে বহু কোটি টাকার শামিয়ানা খাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের সযোগ-সুবিধা রয়েছে সেখানে।
বিভিন্ন সমাজকর্মী বলছেন, রামদেব আগে তাঁর সম্পত্তির হিসাব ঘোষণা করুন, তারপর দুর্নীতির বিরুদ্ধে নামুন।
এএফপি, রয়টার্স ও পিটিআই অনলাইন
সূত্র: প্রথম আলো, ০৫/০৬/২০১১ইং, রবিবার
No comments:
Post a Comment