এমন পলিথিন, যা মিশে যায় মাটির সঙ্গে। পরে এটি পরিবেশবান্ধব ও ধীরগতির সার হিসেবে ব্যবহূত হবে। আর এ পলিথিন তৈরিতে ব্যবহূত হয়েছে পরিচিত সব জিনিস। ক্ষতিকর পলিথিনের মাটিতে মিশ্রণীয় পরিবেশবান্ধব এমনই এক বিকল্প উদ্ভাবন করেছেন অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান। মাটিতে মিশে যায় এমন পলিথিন তৈরির খবর শোনা যায়। তবে মাটিতে মিশ্রণীয় পলিথিন তৈরিতে ওয়াহিদুজ্জামানের পদ্ধতিটি নতুন।ভাতের মাড়, চালের গুঁড়া, আলু, অ্যারারুট প্রভৃতি শ্বেতসার-জাতীয় পদার্থের সঙ্গে পলিভিনাইল অ্যালকোহল (পিভিএ), জিগাগাছের আঠা, ইউরিয়া, চিনি, সয়াবিন তেল মিশিয়ে বিকল্প পলিথিন উদ্ভাবন করেছেন তিনি।
বিকল্প এই পলিথিন ছিল এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের পিএইচডি গবেষণার বিষয়। গত ৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক বিশেষ সভায় রসায়ন বিভাগের গবেষক এস এম ওয়াহিদুজ্জামানকে তাঁর ‘প্রিপারেশন অ্যান্ড ক্যারেক্টারাইজেশন অব বায়োব্লেন্ড অব ন্যাচারালি অকারিং পলিমারস অ্যান্ড ওয়াটার সুলিউবল পলিমারস টেকনিক’ শিরোনামের অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোবারক আহমদ খানের যুগ্ম তত্ত্বাবধানে তিনি এ গবেষণা সম্পন্ন করেন।
ওয়াহিদুজ্জামান জানালেন, রাসায়নিক পদার্থ ইথিলিনের পলিমার হচ্ছে পলিথিন। এই পলিথিন মাটি ও পানিতে মিশ্রণীয় না হওয়ায় পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তা ছাড়া সম্প্রতি পশ্চিমা বিশ্ব ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়কজাত দ্রব্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে। আমাদের দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে প্যাকেজিংয়ের কাজে ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহার করা হয়। সুবিধাজনক কোনো বিকল্প না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে এ পলিথিন ব্যবহার করছে। তাই সব দিক মিলিয়ে এই ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
ঠিক এমন সময়ই অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান ভাতের মাড়, চালের গুঁড়া, আলু, অ্যারারুট প্রভৃতি শ্বেতসার-জাতীয় পদার্থের সঙ্গে পলিভিনাইল অ্যালকোহল (পিভিএ), জিগাগাছের আঠা, ইউরিয়া, চিনি, সয়াবিন তেল মিশিয়ে পলিথিনের মতোই এর বিকল্প উদ্ভাবন করেন। গামা রশ্মি বিকিরণের সাহায্যে উৎপন্ন পলিমারকে ক্রস লিংক বা আড়াআড়ি সংযোগ ঘটিয়ে এর গুণগত মান এবং উৎকর্ষ সাধন করা হয়েছে। বাজারে প্রচলিত পলিথিনের মতো এমন একটি পণ্য বানাতে ২০ শতাংশ চালের গুঁড়া, ১০ শতাংশ ইউরিয়া ও ৭০ শতাংশ পিভিএ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের বিকল্প পলিথিন মাটির মধ্যে ৪২ দিনে ৩০ শতাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ধীরে ধীরে এটি পুরোপুরি ক্ষয় হয়ে যায়। এটি পানির মধ্যে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। তবে পিভিএর পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর স্থায়িত্ব ও টেকসইয়ের মানও বাড়ানো যায়। এটি সাশ্রয়ী এবং মাটিতে মিশ্রণীয় বলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।
ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বাজারে প্রচলিত পলিথিন পরিবেশের জন্য হুমকি হওয়ায় এর বিকল্প উদ্ভাবনের চেষ্টা চালানোর পর তাঁরা সাফল্য অর্জন করেন। এটি বানাতে প্রাকৃতিক এবং শ্বেতসার বা স্টার্চ-জাতীয় পদার্থের সঙ্গে পলিভিনাইল অ্যালকোহল (পিভিএ) মিশিয়ে পলিথিনের বিকল্প পলিমার-জাতীয় পদার্থ উদ্ভাবন করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই পলিমারকে এক্সটোডার যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া এর মধ্যে ইউরিয়া থাকায় মাটিতে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এটি ধীরগতির সার হিসেবেও ব্যবহূত হবে। প্রচলিত পলিথিনের চেয়ে এর দাম একটু বেশি হলেও বাণিজ্যিকভাবে এটি উৎপাদন করা হলে দাম প্রচলিত পলিথিনের সমপর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি জানান।
এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আটটি পাঠ্যপুস্তকের রচয়িতা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকীতে তাঁর চারটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ফেলোশিপ অর্জন করেন।
সূত্র: প্রথম আলো
বিকল্প এই পলিথিন ছিল এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের পিএইচডি গবেষণার বিষয়। গত ৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক বিশেষ সভায় রসায়ন বিভাগের গবেষক এস এম ওয়াহিদুজ্জামানকে তাঁর ‘প্রিপারেশন অ্যান্ড ক্যারেক্টারাইজেশন অব বায়োব্লেন্ড অব ন্যাচারালি অকারিং পলিমারস অ্যান্ড ওয়াটার সুলিউবল পলিমারস টেকনিক’ শিরোনামের অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোবারক আহমদ খানের যুগ্ম তত্ত্বাবধানে তিনি এ গবেষণা সম্পন্ন করেন।
ওয়াহিদুজ্জামান জানালেন, রাসায়নিক পদার্থ ইথিলিনের পলিমার হচ্ছে পলিথিন। এই পলিথিন মাটি ও পানিতে মিশ্রণীয় না হওয়ায় পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তা ছাড়া সম্প্রতি পশ্চিমা বিশ্ব ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়কজাত দ্রব্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে। আমাদের দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে প্যাকেজিংয়ের কাজে ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহার করা হয়। সুবিধাজনক কোনো বিকল্প না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে এ পলিথিন ব্যবহার করছে। তাই সব দিক মিলিয়ে এই ক্ষতিকর পলিথিনের বিকল্প উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
ঠিক এমন সময়ই অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান ভাতের মাড়, চালের গুঁড়া, আলু, অ্যারারুট প্রভৃতি শ্বেতসার-জাতীয় পদার্থের সঙ্গে পলিভিনাইল অ্যালকোহল (পিভিএ), জিগাগাছের আঠা, ইউরিয়া, চিনি, সয়াবিন তেল মিশিয়ে পলিথিনের মতোই এর বিকল্প উদ্ভাবন করেন। গামা রশ্মি বিকিরণের সাহায্যে উৎপন্ন পলিমারকে ক্রস লিংক বা আড়াআড়ি সংযোগ ঘটিয়ে এর গুণগত মান এবং উৎকর্ষ সাধন করা হয়েছে। বাজারে প্রচলিত পলিথিনের মতো এমন একটি পণ্য বানাতে ২০ শতাংশ চালের গুঁড়া, ১০ শতাংশ ইউরিয়া ও ৭০ শতাংশ পিভিএ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের বিকল্প পলিথিন মাটির মধ্যে ৪২ দিনে ৩০ শতাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ধীরে ধীরে এটি পুরোপুরি ক্ষয় হয়ে যায়। এটি পানির মধ্যে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। তবে পিভিএর পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর স্থায়িত্ব ও টেকসইয়ের মানও বাড়ানো যায়। এটি সাশ্রয়ী এবং মাটিতে মিশ্রণীয় বলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।
ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বাজারে প্রচলিত পলিথিন পরিবেশের জন্য হুমকি হওয়ায় এর বিকল্প উদ্ভাবনের চেষ্টা চালানোর পর তাঁরা সাফল্য অর্জন করেন। এটি বানাতে প্রাকৃতিক এবং শ্বেতসার বা স্টার্চ-জাতীয় পদার্থের সঙ্গে পলিভিনাইল অ্যালকোহল (পিভিএ) মিশিয়ে পলিথিনের বিকল্প পলিমার-জাতীয় পদার্থ উদ্ভাবন করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই পলিমারকে এক্সটোডার যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া এর মধ্যে ইউরিয়া থাকায় মাটিতে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এটি ধীরগতির সার হিসেবেও ব্যবহূত হবে। প্রচলিত পলিথিনের চেয়ে এর দাম একটু বেশি হলেও বাণিজ্যিকভাবে এটি উৎপাদন করা হলে দাম প্রচলিত পলিথিনের সমপর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি জানান।
এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আটটি পাঠ্যপুস্তকের রচয়িতা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকীতে তাঁর চারটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ফেলোশিপ অর্জন করেন।
সূত্র: প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment