‘হুমকি-ধমকি যদি কেউ দিয়ে থাকে, আমারে কইবেন। আপনাদের কিচ্ছু করতে হইব না। রাতের বেলায় ঘরে গিয়ে হুমকির জবাব দিয়ে আসব। কাউরে যাইতে হইব না। প্রতিটা বাড়িত বাড়িত গিয়ে আমি হুমকি দিয়া আসব। জবাব চামু। ভাই, হুমকি কেন দিচ্ছ? ওই কাজটা আমি ভালো পারি। শুধু পাঞ্জাবি বদলাইয়া জিনসের প্যান্টটা পরতে হইব।
আর আমরা যদি জিগাইতে যাই, তাইলে শহরে কেউ থাকব না। আমরা সাচ্চা আওয়ামী লীগার। ক্ষমতায় এখনো আওয়ামী লীগ আছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়া নাইক্কা। বদলাই হালামু সবকিছু উল্টাইয়া।’
সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত সরকারি দল-সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর অনুগতদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। শহরের উত্তর চাষাঢ়ায় পৈতৃক বাসভবন হীরা মহলে অনুগত নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করেন তিনি। তারপর এসব নেতা-কর্মী নিয়ে তিনি শহরে ‘চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ’ ডাক দিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করেন।
শামীম ওসমান অনুগতদের উদ্দেশে বলেন, ‘নির্বাচনে হারার পরে সাংবাদিক সব্বাইরে ডাকাইয়া অপর পক্ষের হয়ে মিষ্টি খাওয়াইতে পারে কেউ? আমি সাংবাদিকদের মিষ্টি খাওয়াইছি, আমাগো বইন (আইভী) জিতছে দেইখা। কইছি—খা, খা না, তোরা খা না। তো, এইটা ব্রিটেনেও আজ পর্যন্ত হয় নাই।’
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কী আলাপ হয়েছে, কর্মীদের তা জানাতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘দলের কাছে ক্লিয়ার (পরিষ্কার) হইয়া গেছে, কারা বিএনপির, কারা জামায়াতের। আমি একটা জিনিস মনে করি, মজিবর ভাই (স্থানীয় নেতা) খাটতে খাটতে টায়ার্ড (ক্লান্ত), আমিও খাটতে খাটতে টায়ার্ড। সবাই খাটা-খাটনি করে টায়ার্ড হইয়া গেছি। তো, আমি আমার ছোট বোনের ব্যাপারে একটা পরামর্শ দিছি যে, দেখো, তোমার বিরুদ্ধে একটা অপপ্রচার হইছে যে, তুমি বিএনপি-জামায়াতের লোক। তারাই তোমারে ভোট দিছে। যা-ই হোক, এই মিথ্যাটা আমিই প্রচার করছি যে তুমি বিএনপি-জামায়াতের লোক। তো, মিথ্যা তো মিথ্যাই। এখন এটা তোমারে মিথ্যা প্রমাণ করতে হইব। কী করতে অইব? জামায়াত-বিএনপির আন্দোলন আইতেছে সামনে; এইত্তো ঈদের পরে। আমি কইছি আপারে (প্রধানমন্ত্রী) যে, আপা, আমার ছোট বইন আইভী আগামী তিন-চার মাস তার লোকজন যারা আছে তাদের নিয়া একটু জামায়াত-বিএনপিকে মোকাবিলা করুক। আমরা তো গেছি, এমনিও গেছি অমনিও গেছি। মোকাবেলা করলে যেটা হইব, এই যে ওর বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা অপপ্রচার আমরা চালাইছিলাম, এটা সংশোধন হইয়া যাইব। আমাদেরও একটা বিশ্বাস জাগব যে, নাহ্, ও তো অ্যান্টি-জামায়াত, অ্যান্টি-বিএনপি। আমরা মিলামিশা সবাই কাজ করব। কাজ করতে সুবিধা হইব।’
বিএনপি-জামায়াত প্রসঙ্গে শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘বিগত সংসদ নির্বাচনে সিটি করপোরেশন এলাকায় বিএনপি-জামায়াত ভোট পেয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার ৮৩৫টা। এখন গ্যাস, বিদ্যুৎ-সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বিএনপি-জামায়াতের ভোট আরও বাড়ার কথা। ভোট গেছে কই? ভোট তো পড়ছে ৭০ শতাংশ। আর ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এলাকায় যেটা দেখলাম, ওখানে ভোট পড়ছে ৮০ থেকে ৮৫, ৯০ শতাংশ। কেন হইছে, কীভাবে হইছে, আমি জানি না। ওগুলো নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলব না। যারা তোলার তুলবে। এটা আমাদের কাজ না। আমরা সরকারি দল করি। আমাদের কাজ হইল নির্বাচন সুষ্ঠু করে দেওয়া। আমরা করে দিয়েছি। একটা ঝামেলা হয় নাই, একটা ধাক্কাধাক্কি হয় নাই। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, নারায়ণগঞ্জবাসী সম্মানিত হয়েছে। এটাই আমাদের জয়।’
শামীম ওসমান গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘নেত্রী আমাকে বলেছেন, কসম আল্লাহর বলছি, উনি বলছেন আমারে যে, “আমি কারও কাছে এত কৃতজ্ঞ হইনি জীবনে, যেটুক কৃতজ্ঞ তুমি আমাকে করেছ”, এক্কেবারে আইভীর সামনেই বলছে যে, “তুমি যে ধৈর্য দেখাইছ। আমি জানি, তুমি ১০ মিনিটের মধ্যে সকল ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারতা। নির্বাচন বন্ধ করাইতে পারতা। বিএনপি বয়কট করার পর তোমার আর নির্বাচন করার কথা ছিল না। কারণ আমি দাঁড়াইলেও হয়তো বিএনপির দুই-একটা ভোট পাব। কিন্তু তুমি একটাও পাইবা না। তার পরও তুমি নির্বাচনে ছিলা ক্যান? যে নির্বাচনটা হোক। এত কিছুর পরও তুমি নির্বাচন করায় তোমার ইমেজ ভালো হয়েছে। আমারও ইমেজ ভালো হইছে, সারা পৃথিবীর কাছে আমি কইতে পারুম, দেখো, নির্বাচন ক্যামনে করতে হয় তা আমি দেখাই দিলাম।”’
শামীম বলেন, ‘নেত্রীকে বলেছি, রাজনীতিতে আপনার উত্তরাধিকার অবশ্যই যেন আপনার রক্তের লোক হয়। আপনার রক্তের উত্তরাধিকারী যদি থাকে, তাইলে আছি, নাইলে নাইক্কা। আমরা চাই জয় আইসা রাজনীতি ধরুক। রেহানা আপা আসুক, যে-ই আইসা ধরে ধরুক, ববি ধরুক। আপনার পরিবারের সদস্য থাকতে হবে। আপা কয়, নাম অনেক হইছে শামীম; আর না, আর না। আমি বললাম, আপনি লক্ষ লক্ষ কর্মী কার কাছে ছেড়ে দিবেন? এদের দিয়ে হইব? আপনি দেশে নাই, আর খেলে দিল!’
কর্মীদের সামনে নিজের পরাজয়ের ব্যক্তিগত মূল্যায়নও তুলে ধরেছেন শামীম। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে। বিএনপি বইয়া যাওয়ার পরও কেউ আমগোর লগে পারত না। পারছে কেন জানেন? পারছে কারণ, একেকটি ওয়ার্ডে আমগো ছয়-সাতজন লোক কাউন্সিলর প্রার্থী খাড়াইয়া গেল। হগলই খাড়াইয়া গেলোগা। হগলে বোলে পাস করব। পরে কী হইল? তারা যার যার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রইল। দেখা গেল, আমার নির্বাচন করার মতো লোক মাঠে নেই। প্রতি ওয়ার্ডে আমার একজন করে প্রার্থী হলে ২৭টি ওয়ার্ডেই আমার লোক জিতত। আমার লোকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে ঠিকমতো কাজ করলে বিএনপির প্রার্থী বসে যাবার পরও আমি জিততাম।’
কর্মীদের উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে গেছে কডা, দেহেন না! বিএনপি-জামায়াত, মিডিয়ার বেশির ভাগ, বামপন্থী তা হগলেই গেছে গা—মেনন-ছেনন, ইনু—হগলে এক হইছে। আরেকটা ছিল, দুই পা গেছে গা কবরে, (গালি) নাম ভুলে গেছি গা, (কর্মীরা বলছে মূসা মূসা)। নেত্রীরেও কইছি, ওই যে দুই ঠ্যাং কবরে, আপা বুঝছে, লগে লগে কইলো মূসা মূসা।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘এই প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার মনে করছিল, আইভী তো নেত্রীর কাছে যাইব না। শামীম ওসমান বলদ না, বুদ্ধি রাখি, এর লাইগাই ধন্যবাদ জানাইছি। হে তো নেত্রীর কাছে চইলা গেছে। এই দুই দিন পর আবার দেখবেন, এই পত্রিকাটা আমার বইনটারে লই কী লেখা শুরু করে। কী খেলা শুরু করে।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে শামীম বলেন, ‘নির্বাচনের দুই দিন আগে টিভিতে দেখলাম, এক নির্বাচন কমিশনার ফাইল নেড়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, অমুক প্রার্থীর বিরুদ্ধে এত মামলা রয়েছে। অমুক প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ থেকেই বোঝা যায়, কে ভালো মানুষ। আমি এখন ইচ্ছে করলে সব কথার জবাব দিতে পারি। আমাকে হাত-পা বেঁধে নদীতে গোসল করতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’
সভায় শামীম ওসমান ছিলেন একমাত্র বক্তা। উপস্থিত ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, প্রচার সম্পাদক জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, পারভেজ (ক্যাঙ্গারু পারভেজ), ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল, সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফরিদ আহমেদ ওরফে লিটন। সভায় ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর এলাকা থেকে আসা লোকের সংখ্যাই ছিল বেশি। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুগতদের এই সভা চলে।
সভা শেষে কয়েক শ লোক নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন শামীম ওসমান। এ সময় পথচারীদের মাঝে একটি প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। কড়া পুলিশি পাহারার মধ্যে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ‘ক্যাডাররা’ তাঁকে ঘিরে হাঁটেন।
জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কোনো বিশৃঙ্খলা করা হবে না—শামীম ওসমানের কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি পেয়েই তাঁকে রাস্তায় নামার অনুমতি দেওয়া হয়।
লিফলেটে যা বলেছেন শামীম: লিফলেটে গত ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন জানান শামীম ওসমান।
এতে বলা হয়, ‘আপনারা জানেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শুধু প্রগতিশীল ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির পক্ষে কথা বলার অপরাধে বিএনপির প্রার্থীকে রাতের আঁধারে বসিয়ে দেওয়া, নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ ও বক্তব্য দেওয়া, কিছু মুখচেনা পয়সায় কেনা বুদ্ধিজীবীর ব্যাপক অপপ্রচার এবং আমাকে ও নারায়ণগঞ্জবাসীকে সন্ত্রাসী বানানোর শত অপচেষ্টা সত্ত্বেও আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচনের যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, সে জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ।’
প্রচারপত্রে নগরবাসীর উদ্দেশে বলা হয়, ‘এত কিছুর পরও আপনাদের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, সেই ঋণ শোধ করার মতো ক্ষমতা আমার মতো নগণ্য মানুষের নেই। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মাঝেই সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বসবাস। তাই বাকি জীবন আপনাদের খুশি করে আমি সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করতে চাই। নির্বাচনে যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। যাঁরা ভোট দেননি, নিশ্চয় আমি তাঁদের মন জয় করতে পারিনি, তাঁদেরও জানাই আমার শ্রদ্ধা ও সালাম।’
প্রচারপত্রে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ, আমার কোনো ক্ষমতা নেই। তার পরও আপনারা মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন, তিনি যেন আমাকে আপনাদের সুখে-দুঃখে যেকোনো সমস্যায় আপনাদের পাশে থেকে সেবা করার তৌফিক দান করেন। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি আধুনিক সুখী নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলি। আমাদের স্লোগান হোক “চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ।”’
সূত্র: প্রথম আলো
আর আমরা যদি জিগাইতে যাই, তাইলে শহরে কেউ থাকব না। আমরা সাচ্চা আওয়ামী লীগার। ক্ষমতায় এখনো আওয়ামী লীগ আছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়া নাইক্কা। বদলাই হালামু সবকিছু উল্টাইয়া।’
সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত সরকারি দল-সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর অনুগতদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। শহরের উত্তর চাষাঢ়ায় পৈতৃক বাসভবন হীরা মহলে অনুগত নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করেন তিনি। তারপর এসব নেতা-কর্মী নিয়ে তিনি শহরে ‘চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ’ ডাক দিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করেন।
শামীম ওসমান অনুগতদের উদ্দেশে বলেন, ‘নির্বাচনে হারার পরে সাংবাদিক সব্বাইরে ডাকাইয়া অপর পক্ষের হয়ে মিষ্টি খাওয়াইতে পারে কেউ? আমি সাংবাদিকদের মিষ্টি খাওয়াইছি, আমাগো বইন (আইভী) জিতছে দেইখা। কইছি—খা, খা না, তোরা খা না। তো, এইটা ব্রিটেনেও আজ পর্যন্ত হয় নাই।’
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কী আলাপ হয়েছে, কর্মীদের তা জানাতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘দলের কাছে ক্লিয়ার (পরিষ্কার) হইয়া গেছে, কারা বিএনপির, কারা জামায়াতের। আমি একটা জিনিস মনে করি, মজিবর ভাই (স্থানীয় নেতা) খাটতে খাটতে টায়ার্ড (ক্লান্ত), আমিও খাটতে খাটতে টায়ার্ড। সবাই খাটা-খাটনি করে টায়ার্ড হইয়া গেছি। তো, আমি আমার ছোট বোনের ব্যাপারে একটা পরামর্শ দিছি যে, দেখো, তোমার বিরুদ্ধে একটা অপপ্রচার হইছে যে, তুমি বিএনপি-জামায়াতের লোক। তারাই তোমারে ভোট দিছে। যা-ই হোক, এই মিথ্যাটা আমিই প্রচার করছি যে তুমি বিএনপি-জামায়াতের লোক। তো, মিথ্যা তো মিথ্যাই। এখন এটা তোমারে মিথ্যা প্রমাণ করতে হইব। কী করতে অইব? জামায়াত-বিএনপির আন্দোলন আইতেছে সামনে; এইত্তো ঈদের পরে। আমি কইছি আপারে (প্রধানমন্ত্রী) যে, আপা, আমার ছোট বইন আইভী আগামী তিন-চার মাস তার লোকজন যারা আছে তাদের নিয়া একটু জামায়াত-বিএনপিকে মোকাবিলা করুক। আমরা তো গেছি, এমনিও গেছি অমনিও গেছি। মোকাবেলা করলে যেটা হইব, এই যে ওর বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা অপপ্রচার আমরা চালাইছিলাম, এটা সংশোধন হইয়া যাইব। আমাদেরও একটা বিশ্বাস জাগব যে, নাহ্, ও তো অ্যান্টি-জামায়াত, অ্যান্টি-বিএনপি। আমরা মিলামিশা সবাই কাজ করব। কাজ করতে সুবিধা হইব।’
বিএনপি-জামায়াত প্রসঙ্গে শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘বিগত সংসদ নির্বাচনে সিটি করপোরেশন এলাকায় বিএনপি-জামায়াত ভোট পেয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার ৮৩৫টা। এখন গ্যাস, বিদ্যুৎ-সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বিএনপি-জামায়াতের ভোট আরও বাড়ার কথা। ভোট গেছে কই? ভোট তো পড়ছে ৭০ শতাংশ। আর ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এলাকায় যেটা দেখলাম, ওখানে ভোট পড়ছে ৮০ থেকে ৮৫, ৯০ শতাংশ। কেন হইছে, কীভাবে হইছে, আমি জানি না। ওগুলো নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলব না। যারা তোলার তুলবে। এটা আমাদের কাজ না। আমরা সরকারি দল করি। আমাদের কাজ হইল নির্বাচন সুষ্ঠু করে দেওয়া। আমরা করে দিয়েছি। একটা ঝামেলা হয় নাই, একটা ধাক্কাধাক্কি হয় নাই। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, নারায়ণগঞ্জবাসী সম্মানিত হয়েছে। এটাই আমাদের জয়।’
শামীম ওসমান গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘নেত্রী আমাকে বলেছেন, কসম আল্লাহর বলছি, উনি বলছেন আমারে যে, “আমি কারও কাছে এত কৃতজ্ঞ হইনি জীবনে, যেটুক কৃতজ্ঞ তুমি আমাকে করেছ”, এক্কেবারে আইভীর সামনেই বলছে যে, “তুমি যে ধৈর্য দেখাইছ। আমি জানি, তুমি ১০ মিনিটের মধ্যে সকল ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারতা। নির্বাচন বন্ধ করাইতে পারতা। বিএনপি বয়কট করার পর তোমার আর নির্বাচন করার কথা ছিল না। কারণ আমি দাঁড়াইলেও হয়তো বিএনপির দুই-একটা ভোট পাব। কিন্তু তুমি একটাও পাইবা না। তার পরও তুমি নির্বাচনে ছিলা ক্যান? যে নির্বাচনটা হোক। এত কিছুর পরও তুমি নির্বাচন করায় তোমার ইমেজ ভালো হয়েছে। আমারও ইমেজ ভালো হইছে, সারা পৃথিবীর কাছে আমি কইতে পারুম, দেখো, নির্বাচন ক্যামনে করতে হয় তা আমি দেখাই দিলাম।”’
শামীম বলেন, ‘নেত্রীকে বলেছি, রাজনীতিতে আপনার উত্তরাধিকার অবশ্যই যেন আপনার রক্তের লোক হয়। আপনার রক্তের উত্তরাধিকারী যদি থাকে, তাইলে আছি, নাইলে নাইক্কা। আমরা চাই জয় আইসা রাজনীতি ধরুক। রেহানা আপা আসুক, যে-ই আইসা ধরে ধরুক, ববি ধরুক। আপনার পরিবারের সদস্য থাকতে হবে। আপা কয়, নাম অনেক হইছে শামীম; আর না, আর না। আমি বললাম, আপনি লক্ষ লক্ষ কর্মী কার কাছে ছেড়ে দিবেন? এদের দিয়ে হইব? আপনি দেশে নাই, আর খেলে দিল!’
কর্মীদের সামনে নিজের পরাজয়ের ব্যক্তিগত মূল্যায়নও তুলে ধরেছেন শামীম। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে। বিএনপি বইয়া যাওয়ার পরও কেউ আমগোর লগে পারত না। পারছে কেন জানেন? পারছে কারণ, একেকটি ওয়ার্ডে আমগো ছয়-সাতজন লোক কাউন্সিলর প্রার্থী খাড়াইয়া গেল। হগলই খাড়াইয়া গেলোগা। হগলে বোলে পাস করব। পরে কী হইল? তারা যার যার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রইল। দেখা গেল, আমার নির্বাচন করার মতো লোক মাঠে নেই। প্রতি ওয়ার্ডে আমার একজন করে প্রার্থী হলে ২৭টি ওয়ার্ডেই আমার লোক জিতত। আমার লোকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে ঠিকমতো কাজ করলে বিএনপির প্রার্থী বসে যাবার পরও আমি জিততাম।’
কর্মীদের উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে গেছে কডা, দেহেন না! বিএনপি-জামায়াত, মিডিয়ার বেশির ভাগ, বামপন্থী তা হগলেই গেছে গা—মেনন-ছেনন, ইনু—হগলে এক হইছে। আরেকটা ছিল, দুই পা গেছে গা কবরে, (গালি) নাম ভুলে গেছি গা, (কর্মীরা বলছে মূসা মূসা)। নেত্রীরেও কইছি, ওই যে দুই ঠ্যাং কবরে, আপা বুঝছে, লগে লগে কইলো মূসা মূসা।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘এই প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার মনে করছিল, আইভী তো নেত্রীর কাছে যাইব না। শামীম ওসমান বলদ না, বুদ্ধি রাখি, এর লাইগাই ধন্যবাদ জানাইছি। হে তো নেত্রীর কাছে চইলা গেছে। এই দুই দিন পর আবার দেখবেন, এই পত্রিকাটা আমার বইনটারে লই কী লেখা শুরু করে। কী খেলা শুরু করে।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে শামীম বলেন, ‘নির্বাচনের দুই দিন আগে টিভিতে দেখলাম, এক নির্বাচন কমিশনার ফাইল নেড়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, অমুক প্রার্থীর বিরুদ্ধে এত মামলা রয়েছে। অমুক প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ থেকেই বোঝা যায়, কে ভালো মানুষ। আমি এখন ইচ্ছে করলে সব কথার জবাব দিতে পারি। আমাকে হাত-পা বেঁধে নদীতে গোসল করতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’
সভায় শামীম ওসমান ছিলেন একমাত্র বক্তা। উপস্থিত ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, প্রচার সম্পাদক জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, পারভেজ (ক্যাঙ্গারু পারভেজ), ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল, সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফরিদ আহমেদ ওরফে লিটন। সভায় ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর এলাকা থেকে আসা লোকের সংখ্যাই ছিল বেশি। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুগতদের এই সভা চলে।
সভা শেষে কয়েক শ লোক নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন শামীম ওসমান। এ সময় পথচারীদের মাঝে একটি প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। কড়া পুলিশি পাহারার মধ্যে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ‘ক্যাডাররা’ তাঁকে ঘিরে হাঁটেন।
জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কোনো বিশৃঙ্খলা করা হবে না—শামীম ওসমানের কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি পেয়েই তাঁকে রাস্তায় নামার অনুমতি দেওয়া হয়।
লিফলেটে যা বলেছেন শামীম: লিফলেটে গত ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন জানান শামীম ওসমান।
এতে বলা হয়, ‘আপনারা জানেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শুধু প্রগতিশীল ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির পক্ষে কথা বলার অপরাধে বিএনপির প্রার্থীকে রাতের আঁধারে বসিয়ে দেওয়া, নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ ও বক্তব্য দেওয়া, কিছু মুখচেনা পয়সায় কেনা বুদ্ধিজীবীর ব্যাপক অপপ্রচার এবং আমাকে ও নারায়ণগঞ্জবাসীকে সন্ত্রাসী বানানোর শত অপচেষ্টা সত্ত্বেও আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচনের যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, সে জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ।’
প্রচারপত্রে নগরবাসীর উদ্দেশে বলা হয়, ‘এত কিছুর পরও আপনাদের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, সেই ঋণ শোধ করার মতো ক্ষমতা আমার মতো নগণ্য মানুষের নেই। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মাঝেই সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বসবাস। তাই বাকি জীবন আপনাদের খুশি করে আমি সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করতে চাই। নির্বাচনে যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। যাঁরা ভোট দেননি, নিশ্চয় আমি তাঁদের মন জয় করতে পারিনি, তাঁদেরও জানাই আমার শ্রদ্ধা ও সালাম।’
প্রচারপত্রে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ, আমার কোনো ক্ষমতা নেই। তার পরও আপনারা মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন, তিনি যেন আমাকে আপনাদের সুখে-দুঃখে যেকোনো সমস্যায় আপনাদের পাশে থেকে সেবা করার তৌফিক দান করেন। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি আধুনিক সুখী নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলি। আমাদের স্লোগান হোক “চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ।”’
সূত্র: প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment