অবশেষে ১৯৭৪ সালের নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি হলো। সেলিনা হায়াৎ আইভী অবশ্য তেমনটাই প্রত্যাশা করেছিলেন। সেই আশায় তিনি দলীয় সমর্থন না পেয়েও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর ভরসা রেখে নির্বাচনী মাঠে নেমেছিলেন। তাঁর সেই আশা পূরণ হলো। দোর্দণ্ড প্রতিপক্ষ শামীম ওসমানকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হলেন।
১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আইভীর বাবা জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা আলী আহাম্মেদ চুনকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়েছিলেন। কিন্তু দলটি সমর্থন দিয়েছিল আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে। দলের সমর্থনই যে সবকিছু নয়, জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আলী আহাম্মেদ চুনকার জয় ইতিহাস তৈরি করেছিল।
৩৭ বছর পর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে এবার সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হলো। আর সেই ইতিহাস গড়লেন আহম্মেদ চুনকারই মেয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত আইভীও দলের সমর্থন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও বিতর্কিত সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানকে। দলের সিদ্ধান্তে মোটেই বিচলিত কিংবা হতাশ হননি আইভী। নির্বাচনী প্রচারকালে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতা এবং গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিগুলো থেকে তাঁর সেই অবিচল মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
শামীম ওসমান ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন দলের সমর্থন নিয়ে, অন্যদিকে আইভী ভোটের ময়দানে কোমর বেঁধে নামেন জনসমর্থনের ওপর ভরসা করে। কিন্তু দলীয় সমর্থনের জোরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা শামীম ওসমান জনতার রায়ে পরাজিত হয়েছেন। অথচ তিনি তাঁর প্রায় সব সাক্ষাৎকারে এতোদিন নিজের বিজয়ের ব্যাপারে জোর দাবি করে এসেছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গেই আছেন। তবে জনতা তাঁর সঙ্গে আছে কি না, তা কখনো জোর দিয়ে বলেননি। তাই সেই জনতাই তাঁর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় দিল।
৩৭ বছর আগের সেই নির্বাচনে আইভীর বাবা আহম্মেদ চুনকা আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মহিউদ্দিন খোকাকে ৩০ হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন। আর এবার সেই আওয়ামী লীগেরই সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী শামীম ওসমানকে এক লাখেরও বেশি ভোটে পরাজিত করলেন আইভী।
২০ অক্টোবর প্রথম আলো পত্রিকায় ‘চুয়াত্তরের আশায় আইভী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি ছাপানো হয়। তাতে তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে পৌর নির্বাচনে দলীয় সমর্থন চাইতে শ্রমিক নেতা আলী আহমেদ চুনকা গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। তিনি তা পাননি। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর চুনকা আবারও গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম চুনকা, তুই জিতবি।’ এবারও সেই পরিস্থিতিতে আছেন আইভী। নির্বাচন কমিশন তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কি বঙ্গবন্ধুর কথার প্রতিধ্বনি করে বলবেন, ‘আমি জানতাম আইভী, তুই জিতবি?’ এরকম কোনো সংলাপ আইভীর জন্য অপেক্ষা করছে কিনা, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া জানার পরই তা বোঝা যাবে।
No comments:
Post a Comment