যন্ত্রণাময় দুঃসহ অনেক স্মৃতি আমাদের থাকে, যা থেকে আমরা রেহাই পেতে চাই। মনে করতে
চাই না আর সেই ঘটনা। মাথা থেকে একেবারেই ঝেড়ে ফেলতে চাই। কিন্তু মানুষ চাইলেই সব
পারে না। আর তাই চাইলেও পিছু ছাড়ে না কষ্টের স্মৃতিগুলো, দুঃস্বপ্নের মতো ফিরে আসে
বারবার।
আমরা সাধারণ মানুষ পারি না, কিন্তু হাল ছাড়েননি বিজ্ঞানীরা। তাঁরা লেগে আছেন আমাদের
মুক্তি দিতে। উপায়ও একটা প্রায় বের করে ফেলেছেন। তাঁদের সেই প্রচেষ্টা সফল হলে মানুষ
মুক্তি পাবে দুঃসহ স্মৃতির হাত থেকে। সহজেই মুছে ফেলা যাবে সেই সব স্মৃতি, যা আমাদের কষ্ট
দিয়ে চলেছে।যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড
গ্লেঞ্জম্যানের নেতৃত্বে গবেষণা করছেন একদল গবেষক। তাঁরা দাবি করেছেন, মস্তিষ্ক থেকে কষ্টের
স্মৃতি চিরতরে মুছে ফেলার একটা উপায় তাঁরা প্রায় বের করে ফেলেছেন। মানুষের
বেদনাদায়ক যে স্মৃতিভান্ডার আছে, তার সঙ্গে পিকেএম নামের একটি প্রোটিনের সম্পর্ক
তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন। এই প্রোটিনটির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই মস্তিষ্ক থেকে
বেদনাদায়ক স্মৃতি মুছে ফেলা যাবে। সামুদ্রিক শামুকের ওপর এ পরীক্ষা করে তাঁরা সফলতা
পেয়েছেন।গবেষকেরা জানান, অ্যাপলেসিয়া নামে পরিচিত একধরনের সামুদ্রিক শামুকের
ওপর তাঁরা এই গবেষণা চালান, যা ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলের সাগরে প্রচুর পাওয়া যায়।
এই শামুকের কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্থায় নিউরনের সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার, যেখানে মানুষের ক্ষেত্রে
প্রায় এক ট্রিলিয়ন। তবে কোনো ঘটনা থেকে শেখার এবং তার থেকে স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যাপারে
মানুষের সঙ্গে এই শামুকের মিল আছে।
গবেষকেরা প্রথমে এই শামুককে বৈদ্যুতিক শক দেন। এরপর শামুকটিকে শরীরের মাঝ বরাবর
আস্তে করে খোঁচা দেওয়া হয়। তখন দেখা যায়, শামুকটি ৫০ সেকেন্ড পর নিজেকে গুটিয়ে ফেলছে।
এর এক সপ্তাহ পর গবেষকেরা সেই ক্ষতস্থানে আবার খোঁচা দেন। তখনো শামুকটি সংকুচিত হচ্ছে
কিন্তু এ ক্ষেত্রে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই সেটি ঘটছে। এর থেকে গবেষকদের কাছে পরিষ্কার হয়ে
যায় যে শামুকগুলো কষ্টের নানা অনুভূতি সংরক্ষণ করে রেখেছিল এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দিয়েছে।
এরপর গবেষকেরা ইনজেকশনের মাধ্যমে শামুকের মধ্যে এমন রাসায়নিক ঢুকিয়ে দেন, যা পিকেএম
প্রোটিনের কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়। এরপর তাঁরা ২৪ ঘণ্টা পর আবার শামুকটিকে খোঁচা দিয়ে
দেখেন, তখন সেটি আর প্রায় সাড়া দিচ্ছে না।
অধ্যাপক ডেভিড গ্লেঞ্জম্যান বলেন, ‘আমরা কোষাবাদের মাধ্যমেই এটি করতে পারি। কোষাবাদের
সময় স্নায়ুর সংযোগ এবং মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে বলতে গেলে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।’
তাঁদের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব নিউরোসায়েন্স-এ। গবেষণা সফল হলে এর মাধ্যমে
রণাঙ্গনফেরত যোদ্ধা, ভয়ংকর কোনো ঘটনার স্মৃতিপীড়িত মানুষ, মাদকাসক্ত ব্যক্তি, আলঝেইমার
রোগী ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষের চিকিৎসা সহজ হয়ে যাবে।
গবেষক গ্লেঞ্জম্যান বলেন, ‘আমি মনে করি, মানুষের মস্তিষ্ক থেকে বেদনাদায়ক স্মৃতি আমরা একদিন
সরিয়ে ফেলতে পারব। হয়তো এক্ষুনি নয়, কিন্তু একদিন আমরা আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকতে পারব এবং
সেখানে রক্ষিত বেদনাদায়ক স্মৃতির অবস্থান নির্ণয় করে তা ধ্বংস করে ফেলতে পারব।’ সূত্র: রয়টার্স।
সূত্র: প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment