Accounting

হিসাববিজ্ঞানে ভাল রেজাল্টে আগ্রহী
এস.এস.সি , এইচ.এস.সি ও অনার্সের হিসাববিজ্ঞান নিয়ে সমস্যা আছে...
দেরী না করে নিচের লিংকে ক্লিক কর

Honours & Masters Result

নিচের লিংকে ক্লিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট পেয়ে যাবে

রাশিফল জানতে চান?

তাহলে এখনি নিচের লিংকে ক্লিক করে আপনার রাশি সম্পর্কে জেনে নিন। ২০১২ সালটি আপনার কেমন যাবে জানতে এখনি ক্লিক করুণ.....

Monday, March 26, 2012

ইটভাটায় মধ্যযুগীয় ক্রীতদাসদের মতো শ্রমিকের শিকলবন্দি জীবন



আশরাফুল ইসলাম ও মানিক আহমেদ, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) থেকে: কাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও কাজ থেকে মুক্তি মেলেনি তাদের। উল্টো নির্মম প্রহারের পর সাদা স্ট্যাম্পে দস্তখত নিয়ে তাদের দু’পায়ে পরিয়ে দেয়া হয়েছে শিকল। শিকল বাঁধা পায়ে আহত অবস্থায়ও বাধ্যতামূলকভাবে তাদের শ্রম বিক্রি করতে হয়েছে। জোটেনি ওষুধ কিংবা চিকিৎসা। শিকলবন্দি অবস্থাতেই কাটাতে হয় নির্ঘুম রাত। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ায় উপজেলার টানজামালপুর গ্রামে অবস্থিত এএসবি ইটভাটায় মধ্যযুগীয় ক্রীতদাসদের মতো এভাবেই সাত শ্রমিকের শিকলবন্দি জীবন কাটছিল। স্থানীয় লোকজন শনিবার দিবাগত রাতে গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি জানালে মধ্যরাতে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখান থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা ফিরে রাত ১টার দিকে বিষয়টি পাকুন্দিয়া থানার ওসি আমজাদ হোসেনকে জানান। রাত ২ টার দিকে পুলিশ ইটভাটা থেকে বিল্লাল মিয়া (১৭), উজ্জল মিয়া (১৮), মনির উদ্দিন (১৯), মুহিবুল ইসলাম (১৯), মিয়াব আলী (২২), আবদুল আজিজ (২২) ও গিয়াস উদ্দিন (৪৫) নামে সাত ইটভাটা শ্রমিককে শিকলবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করে। তাদের সবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায়। নির্যাতিত শ্রমিকরা জানায়, ৫-৬ মাস আগে ওই সাত শ্রমিক টানজামালপুর গ্রামের কাজল মিয়া ও বরাবর গ্রামের প্রবাসী হাবিবুর রহমানের যৌথ মালিকানায় পরিচালিত এএসবি ইটভাটায় কাজ শুরু করে। তাদের কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা মালিকপক্ষকে জানায়। শনিবার সকালে এ নিয়ে ইটভাটা মালিক কাজল মিয়ার সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় দুপুরের দিকে কাজল মিয়া ইটভাটায় একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী ডেকে এনে শ্রমিকদের ওপর লেলিয়ে দেয়। বহিরাগত ওইসব সন্ত্রাসীর বেদম প্রহারে তারা গুরুতর আহত হয়। জোর করে সাদা স্ট্যাম্পে নেয়া হয় তাদের স্বাক্ষর। আহত অবস্থায় কোন ওষুধ ও চিকিৎসা না করিয়েই তাদের প্রত্যেকের পায়ে শিকল পরানো হয়। পরে শিকল পরা অবস্থায় তাদের সারাদিন কাজ করতে বাধ্য করানো হয়। শ্রমিকরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে সে কারণে রাতে বিল্লাল মিয়া, উজ্জল মিয়া, মনির উদ্দিন, মুহিবুল ইসলাম, মিয়াব আলী ও আবদুল আজিজ এই ছয়জনকে দু’জন করে পায়ের গোড়ালিতে এবং গিয়াস উদ্দিনকে ঘরের খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থল ঘুরে এসে রাতে পাকুন্দিয়া থানার ওসিকে বিষয়টি অবগত করলে রাত দু’টার দিকে পুলিশ গিয়ে ইটভাটা থেকে ওই সাত শ্রমিককে শিকল বন্দি অবস্থায় উদ্ধার করে। নির্যাতিত শ্রমিকরা জানান, দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করার কথা থাকলেও ইটভাটার মালিকপক্ষ এতদিন জোর করে দৈনিক ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা কাজ করিয়েছে। তারপরও তারা বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের কথা চিন্তা করে মুখ বুজে কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাদের যেতে না দিয়ে তাদের ওপর এমন নির্যাতন চালানো হবে, ভাবতেই পারেননি। প্রচণ্ড মারপিটের পর বহিরাগত সন্ত্রাসীরা জোর করে খালি স্ট্যাম্পে তাদের দস্তখত নিয়ে নেয়। অথচ কাজ শুরু করার সময় তাদের সঙ্গে মালিকপক্ষ কোন চুক্তিপত্র সম্পাদন করেনি। তারা আরও জানান, পায়ে শিকল নিয়ে সারাদিন কাজ করার পর রাতেও তাদের শিকল পরে ঘুমাতে যেতে হয়েছে। এদিকে ইটভাটা থেকে শিকলবন্দি শ্রমিক উদ্ধারের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে মালিকপক্ষের যোগসাজশে একটি মহল বিষয়টি ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। থানা-পুলিশকে ম্যানেজ করে তারা নির্যাতিত শ্রমিকদের আবার একই ইটভাটায় কাজ করানোর নতুন ফন্দি আঁটছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। নির্যাতিত শ্রমিকরা যেন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করতে পারে এ জন্য তাদের লোভনীয় ফাঁদে ফেলে ওই মহল মধ্যস্থতার পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। যে কারণে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে এএসবি ইটভাটার মালিক কাজল মিয়া জানান, তিনি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। পার্শ্ববর্তী একটি ইটভাটার জলিল মিয়া নামে শ্রমিক সর্দার এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বাসিন্দা শ্রমিক সর্দার জলিল মিয়া জানান, দুপুরে ওই ইটভাটার মালিক তাকে খবর দিলে তিনি সেখানে যান। সে সময় সেখানে গিয়ে মালিকপক্ষের লোকজনকে তিনি শ্রমিকদের মারপিট করতে দেখেন। মারপিটের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. আমজাদ হোসেন জানান, শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
সূত্র: মানবজমিন, 26/03/2012

No comments:

Post a Comment