Accounting

হিসাববিজ্ঞানে ভাল রেজাল্টে আগ্রহী
এস.এস.সি , এইচ.এস.সি ও অনার্সের হিসাববিজ্ঞান নিয়ে সমস্যা আছে...
দেরী না করে নিচের লিংকে ক্লিক কর

Honours & Masters Result

নিচের লিংকে ক্লিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট পেয়ে যাবে

রাশিফল জানতে চান?

তাহলে এখনি নিচের লিংকে ক্লিক করে আপনার রাশি সম্পর্কে জেনে নিন। ২০১২ সালটি আপনার কেমন যাবে জানতে এখনি ক্লিক করুণ.....

Monday, July 18, 2011

হৃদয়বিদারক-জীবন থেমে থাকে না




ক্লাসে ঢুকতেই ভেসে উঠল স্মৃতির টুকরো। আবু তোরাবে সহপাঠীদের জন্য কান্না সমকাল
'জীবনের চারপাশে এত দুঃখ এত মৃত্যু জরা/জীবন থামে না তবু, সাজাতেই হয় নিত্য চাহিদা-পসরা'_ কাব্যপঙ্ক্তির এ অমোঘ সত্য যতই নির্মম হোক এরই নাম জীবন। শোকে মুহ্যমান আবু তোরাব স্কুলে পাঁচ দিন পর ঘণ্টা বেজেছে শুনে জীবন সম্পর্কিত এ নির্মম বাস্তবতাই মনে পড়বে সবার। জীবন আসলে কোনো কিছুতেই থেমে থাকে না। থামতে পারে না। গত সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় মিরসরাইয়ে নিহত ৪০ শিশু-কিশোরের মধ্যে ২৭ জনই যে স্কুলের সেই আবু তোরাব বিদ্যালয়ে পাঁচ দিন পর গতকাল শনিবার শোকাহত মন নিয়েই সকাল ১০টায় আবার স্কুল শুরুর ঘণ্টা বাজালেন দফতরি মোঃ শাহজাহান। জাতীয় সঙ্গীত ও শরীরচর্চা শেষে যথারীতি ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ঢুকতেই আবার পাঁচ দিন আগের সেই শোকবিধুর পরিবেশ। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের পরিবেশ মুহূর্তে বিষাদে ভারী হয়ে ওঠে। কাঁদল শিক্ষার্থীরা। কাঁদলেন শিক্ষকরাও। কারণ সেই প্রাণোচ্ছল ২৭ শিক্ষার্থী কোথাও নেই। না শরীরচর্চায়, না অ্যাসেম্বলিতে, না ক্লাসে। চির না-ফেরার দেশে চলে গেছে তারা। এত ছাত্রছাত্রী হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ কেউই। সবার চোখে-মুখে কালো ছায়া। সেদিনের দুর্ঘটনায় যারা সামান্য আহত হয়েছিল, তাদের অনেককে নিয়ে এসেছেন অভিভাবকরা। চটগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে গতকাল শনিবার ১১ জনকে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
পাঁচ দিন পর বিদ্যালয়ে ঘণ্টা বাজল : নির্মম সেই দুর্ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ের দফতরি যেন ভুলে গিয়েছিলেন প্রতিদিনের
মতো ঘণ্টা বাজানোর কথা। গত সোমবার থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বইছে বিদ্যালয়ের ২৭ ছাত্রসহ ৪০ জনকে হারানোর শোক। সমবেদনা জানাতে আবু তোরাব বিদ্যালয়ে গত পাঁচ দিনে ছুটে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, শিক্ষামন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী-এমপি, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সবাই ছিলেন শোকে মুহ্যমান। তারপরও শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে আবার শুরু করতে হবে বিদ্যালয়ের নিয়মিত কর্মকাণ্ড। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয়ের দফতরি মোঃ শাহজাহান পাঁচ দিন পর প্রথম ঘণ্টা বাজান। ১০টা ৪৫ মিনিটে শরীরচর্চা করতে সারিবদ্ধভাবে বিদ্যালয় মাঠে দাঁড়িয়ে পড়ে ছাত্রছাত্রী। কান্নাভরা কণ্ঠে পরিবেশন করা হয় জাতীয় সঙ্গীত। এরপর নিহত ছাত্রদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে সবাইকে নিয়ে দোয়া ও মোনাজাত করেন বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক রবিউল হোসেন নিজামী। মোনাজাত শেষে ছাত্রছাত্রীরা ফিরে যায় যার যার শ্রেণীকক্ষে।
হাজিরা খাতা সামনে নিয়ে কাঁদলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা : শ্রেণীকক্ষে ঢুকে ছাত্রছাত্রীরা সহপাঠীদের জন্য একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ছাত্রছাত্রীদের কান্নার শব্দে বিদ্যালয়ের আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। কান্নার শব্দে বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন বাজারের দোকানদার ও আশপাশের মানুষ। দুর্ঘটনায় নিহত নবম শ্রেণীর ছাত্র ইমরান হোসেন ইমন, সূর্যনাথ, আরিফ হোসেন। শ্রেণীকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ডের পাশে ঝুলছে ইমরান হোসেনের নিজ হাতে বিদ্যালয়ের জন্য করা শ্রেণীভিত্তিক বাড়ির কাজের (এসবিএ) একটি আর্টপেপার। আর্টপেপারটি দেখিয়ে ক্লাসের ছাত্রী মাহেদা আক্তার চিৎকার করে বলতে থাকে_ 'আমরা তোমাদের কী ভাবে ভুলব।' ইমরান হোসেনের পাশে বসত ইমন বড়ূয়া আর সূর্যনাথের পাশে বসত প্রণয় চক্রবর্তী। আজ শ্রেণীকক্ষে ইমরান আর ও সূর্য তাদের পাশে নেই কেন_ বলতে বলতে কাঁদতে থাকে ইমন ও প্রণয়। শুধু ইমন, প্রণয় নয়, পুরো ক্লাসে ছিল কান্নার রোল। হাজিরা খাতা নিয়ে শ্রেণীশিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন কক্ষে এসেও ধরে রাখতে পারেননি চোখের জল। কোনোভাবে সান্ত্বনা দিয়ে বোঝাতে পারছেন না ছাত্রছাত্রীদের। অন্যান্য দিনের মতো ডাকতে পারেননি ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা। উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের রোলনম্বর একটি কাগজে লিখে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকেন তিনি ছাত্রছাত্রীদের দিকে। পরে প্রধান শিক্ষক আবু জাফর সাদেক এসে ছাত্রছাত্রীদের সান্ত্বনা দেন। বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণী শুধু নয়, প্রতিটি কক্ষে ঝরে ছিল ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের চোখের পানি।
আহতদের নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন অভিভাবকরা : সেদিনের দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র রসুল করিম পাপ্পু, রিয়াজউদ্দিন, ষষ্ঠ শ্রেণীর সমীত বড়ূয়া, নিজামউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও ভয়ে তারা বাইরে কাউকে আহত হওয়ার কথা জানায়নি। গতকাল ক্লাস শুরু হওয়ার কথা শুনে অভিভাবকরা তাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। নিজামউদ্দিন জানায়, তার বুকে এখনও প্রচণ্ড ব্যথা। তার মা জহুরা খাতুন বলেন, সেদিনের পর থেকে নিজামউদ্দিন মানুষ চিনতে পারছে না। এক কথা জিজ্ঞেস করলে আরেকটির উত্তর দেয়। শুধু নিজামউদ্দিন নয়, সেদিন আহত হওয়া প্রায় সব ছাত্র এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
আহতদের চিকিৎসা : দুর্ঘটনার শিকার আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ও তদারকির কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অপকা। গতকাল অপকার কর্মকর্তা মোর্শেদা আক্তার শিল্পী আহত ছাত্র নিজামউদ্দিন ও মোঃ ইব্রাহীম নামে এক ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। মোর্শেদা আক্তার শিল্পী সমকালকে জানান, নিজামউদ্দিনের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। মোঃ ইব্রাহীমের শরীরে ব্যথা থাকলেও তেমন বড় কোনো সমস্যা নেই। নিজামউদ্দিনকে মানসিক ডাক্তার দেখানোর জন্য আজ চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে।
আহত ১১ জন বাড়ি ফিরেছে : দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১১ জনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর দেড়টায় তারা নিজ নিজ বাড়ি পেঁৗছেছে বলে জানান মায়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে আসাদের মধ্যে রয়েছে মোল্লাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র জাবেদুল ইসলাম, আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রায়হান উদ্দিন শুভ, জুয়েল বড়ূয়া, মেহেদী হাসান তানিম, বোরহান উদ্দিন, মামুন, আশিক রিজভী, সোহরাব হোসেন, আরিফ হোসেন, কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের নাইটগার্ড আবুল কাশেম ও আলমগীর হোসেন।

বিপুল দাশ, মিরসরাই থেকে 
সূত্র: সমকাল

No comments:

Post a Comment