Accounting

হিসাববিজ্ঞানে ভাল রেজাল্টে আগ্রহী
এস.এস.সি , এইচ.এস.সি ও অনার্সের হিসাববিজ্ঞান নিয়ে সমস্যা আছে...
দেরী না করে নিচের লিংকে ক্লিক কর

Honours & Masters Result

নিচের লিংকে ক্লিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট পেয়ে যাবে

রাশিফল জানতে চান?

তাহলে এখনি নিচের লিংকে ক্লিক করে আপনার রাশি সম্পর্কে জেনে নিন। ২০১২ সালটি আপনার কেমন যাবে জানতে এখনি ক্লিক করুণ.....

Wednesday, April 6, 2011

ডারউইনের কিছু ভবিষ্যদ্বানী






ছবি ১:চার্লস রবার্ট ডারউইন (১২ ফেব্রুয়ারী ১৮০৯ -১৯ এপ্রিল ১৮৮২)
পোট্রেট: ডেনিস এপোসিটো
সুত্র:http://th08.deviantart.net/fs71/PRE/i/2010/241/c/c/charles_darwin_wip_by_dennyshopgirl-d2xkg7h.jpg


আসছে ১৯ এপ্রিল চার্লস ডারউইনের মৃত্যুবার্ষিকী। এই মহান প্রকৃতিবিজ্ঞানীর স্মরণে আমার এই লেখাটি নোভা অনলাইনের প্রধান সম্পাদক পিটার টাইসন এর Darwin's predictions অবলম্বনে লেখা:

তাঁর সময়ের তুলনায় চার্লস ডারউইন অনেক এগিয়ে ছিলেন, শুধুমাত্র এই কথাটা বললে তাঁর প্রতি খুব একটা সুবিচার করা হবে না। বিবর্তনবাদের এই জনকের অনেক অনুমানই ১৮৮২ সালে তার মৃত্যুর অনেক বছর পর এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সম্প্রতি, প্রমানিত হয়েছে আর বিজ্ঞানীরা তাঁর ধারনাগুলোর স্বপক্ষে খুজে পেয়েছেন পর্যাপ্ত পরিমান সব স্বাক্ষ্যপ্রমান। বর্তমানে প্রাপ্ত সকল প্রমান - যা সুষ্পষ্টভাবে তার প্রস্তাবিত প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন প্রক্রিয়া এবং তাঁর আরো কিছু অনুমানকেই সমর্থন করে - এসেছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে, যেমন জীবাশ্মবিদ্যা,ভুতত্ত্ব, জৈবরসায়ন, জীনতত্ত্ব, আনবিক জীববিজ্ঞান এবং অতি সম্প্রতি ইভোলুশনারী ডেভোলপমেন্টাল বায়োলজী বা ‘ইভো ডেভো’। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী কেনেথ মিলার’এর মতে ‘আমরা কোথা থেকে এসেছি এই প্রশ্নের একটি সাধারন উত্তর দেবার জন্য এতোগুলো ক্ষেত্র থেকে আসা প্রমানগুলো যে একটি সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারছে, এই বিষয়টাইতো অত্যন্ত শক্তিশালী। আর একারনেই বিবর্তন তত্ত্বের স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমানের পরিমান অনেক বেশী।’


নিচে ডারউইনের প্রস্তাবিত বিখ্যাত কয়েকটি ধারনা নিয়ে আলোচনা করা হলো:


বিবর্তন হচ্ছে :


ছবি ২: ডারউইনের নোটবুকে জীবন বৃক্ষ স্কেচ 1837 First Notebook on Transmutation of Species by Charles Darwin থেকে।সুত্র:নোভা/পিবিএস।

সর্বপ্রথম বিবর্তন তত্ত্ব কিন্তু ডারউইন প্রস্তাব করেননি, যার মুল বক্তব্য হলো পৃথিবীর সকল জীবিত প্রানীর উৎপত্তি হয়েছে আদি পুর্বসুরী প্রানী থেকে এবং প্রানীদের মধ্যে দৃশ্যমান সকল পার্থক্যগুলোর কারন হলো এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে ক্রমান্বয়ে সংঘটিত পরিবর্তনসমুহ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তাঁর মত করে কেউই এত ভাবেননি কিংবা এর স্বপক্ষে এত প্রমানও সংগ্রহ করেননি । আমাদের সমষ্ঠিগত চেতনায় চার্লস ডারউইনের মত করে আর কেউই বিষয়টিকে একটি স্থায়ী জায়গা করে দিতে পারেননি। বর্তমানে গবেষকরা ইভো ডেভোর জেনেটিক বা জীনতত্ত্বীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের প্রানীর বিবর্তনকে ধারাকে খুজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন, যাদের সম্ভাব্য বিবর্তন ডারউইন তার জীবন বৃক্ষে একেছিলেন ( উপরের ছবিটি ১৮৩৭ সালের তার একটি নোটবুক থেকে নেয়া, তার হাতে আকা বিবর্তনের আলোকে এধরনের একটি প্রথম জীবন বৃক্ষ। নোটবই এর ৩৬ নং পাতায় বিবর্তনীয় জীবন বৃক্ষের উপরে তার লেখা ‘I think’ বাক্যটি লক্ষ্য করুন)। জীনতত্ত্ববিদ 
থিওডোসিয়াস ডোবঝানস্কি লিখেছিলেন,‘বিবর্তনের আলোকে ব্যাখ্যা ছাড়া জীববিজ্ঞানে কোন কিছুরই কোন অর্থ হয়না’।

বিবর্তন প্রক্রিয়া ঘটছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে:


ছবি ৩: উপরে বা দিক থেকে: ব্যাক্টেরিয়া (ছবি-ভিজুয়াল আনলিমিটেড/করবিস), মাশরুম (ছবি- অর্জন ট্রুষ্ট (ছবি: স্টক ফটো.কম), হাতি (ছবি: রবার্ট হার্ডহোল্ট), ফুল (ছবি: জেমস মারগোলিস/স্টক ফটো.কম) (সুত্র:নোভা/পিবিএস।

প্রানীরা যে বিবর্তিত হয় শুধু সে কথা বলেই ডারউইন সন্তুষ্ট থাকেননি। তিনি লিখেছিলেন বিবর্তন তত্ত্বর দৃঢ় ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও এটি সন্তোষজনক হবে না, যদি না তা দেখাতে পারে, ‘কেমন করে এই পৃথিবীতে বসবাসকারী অসংখ্য প্রজাতির প্রানী পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের আকার,আকৃতি আর সহঅভিযোজনের সর্বোত্তম রুপ অর্জন করে, যা খুব সঙ্গত কারনে আমাদের প্রশংসার দাবী রাখে’। যাকে বলা হয় পৃথিবীর সর্বকালের
 সর্বশ্রেষ্ঠ একটি ধারনা, সেখানে ডারউইন এই পরিবর্তনগুলোর কারন হিসাবে প্রস্তাব করেন একটি প্রক্রিয়াকে, যার নামকরন করেন প্রাকৃতিক নির্বাচন। যার মুল বক্তব্য হলো কোন প্রজাতির মধ্যে যে সদস্যরা তাদের পরিবেশের সাথে বেশী সফলতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে তারা, প্রজাতির অপেক্ষাকৃত কম সফল সদস্যদের তুলনায় বেশী দিন বাচবে এবং প্রজননের সুযোগও পাবে বেশী এবং এভাবে তারা তাদের উপযোগী সব বৈশিষ্ট্য এবং জীনগত গুনাবলী তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বিস্তারে অপেক্ষাকৃত সফল হবে। ডারউইন এই তত্ত্ব প্রস্তাবের সময় থেকে আজ, এই মধ্যবর্তী সময়ের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে জীবাশ্মবিদ নীল এল্ডরেজ লিখেছেন, ‘এই অর্ন্তবর্তীকালীন ১৭৫ বছরে আমরা এমন নতুন কিছুই শিখিনি, যা কিনা প্রাকৃতিক নির্বাচন কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে ডারউইনের এর মুল বিবরনের সাথে অসঙ্গতিপুর্ন।`

`
বিবর্তন প্রক্রিয়া ঘটছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে (আগের অনুচ্ছেদের পর):



ছবি ৪: ফিন্চ (চার্লস ডারউইনের 1839 Journal of Researches Into the Natural History and Geology of the Countries Visited During the Voyage of HMS Beagle Round the World, Under the Command of Captn. FitzRoy, R.N. থেকে) (সুত্র: নোভা)।

সুবিধাজনকভাবেই, প্রাকৃতিক নির্বাচন কিভাবে কাজ করছে তার একটি উল্লেখযোগ্য উদহারন হলো গালাপাগোসের ফিন্চ পাখীরা, যারা একসময় ডারউইনকে দিয়েছিল বিশ্বজোড়া খ্যাতি। ১৯৭৩ সাল থেকে, জীববিজ্ঞানী পিটার এবং রোজমেরী গ্রান্ট গালাপাগোস দ্বীপপুন্জ্ঞের ছোট একটা দ্বীপ ডাফনে মেজরে কাজ করছেন। তাদের গবেষনার বিষয় জিওস্পিজা ফর্টিস নামে এক প্রজাতির ফিন্চ (ছবিতে উপরে ডানে, ১৮৩৯ সালে ডারউইনের বীগলে চড়ে সমুদ্রযাত্রার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত একটি বইয়ে যেভাবে প্রকাশিত হয়েছিল)। ১৯৭৭ সালের অনাবৃষ্টিতে অনেক ছোট বীজ তৈরী করে এমন উদ্ভিদ ধ্বংশ হয়েছিল এই দ্বীপে, ফলে খাদ্য হিসাবে এর উপর নির্ভরশীল ১২০০ জিওস্পিজা ফর্টিস ফিন্চের ১০০০ ই মরে যায় সেখানে । গ্রান্ট যুগল আবিষ্কার করেন যে বড় আকারের জিওস্পিজা ফর্টিস, যারা বড় বীজ ভেঙ্গে খেতে সক্ষম তারা আকারে ছোট জিওস্পিজা ফর্টিস, অপেক্ষা সংখ্যায় বেশী ‍বেঁচে যায়। ১৯৭৮ এ যারা বেঁচে ছিল তাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রজনন হয়। এবং এদের প্রজন্মের মধ্যে দেখা যায় তাদের ঠোট পুর্ববর্তী প্রজন্ম অপেক্ষা শতকরা ৪ ভাগ বড়। ২০০৩ আরো একটি অনাবৃষ্টিতে দেখা যায় ছোট ঠোটের জিওস্পিজা ফর্টিস ফিন্চরাই ‍বড় ঠোটের ফিন্চদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী বেঁচে ছিল। আংশিকভাবে এর কারন ঐ দ্বীপে বসবাস স্থাপনকারী আরেকটি বড় আকারের ফিন্চ প্রজাতি জিওস্পিজা ম্যাগনিরসট্রিসের সাথে খাদ্য হিসাবে বড় বীজের জন্য বড় ঠোটের জিওস্পিজা ফর্টিস ফিন্চদের কঠিন প্রতিযোগিতা। ২০০৩ থেকে ২০০৫, গ্রান্টস যুগল আবার আবিষ্কার করলেন, জিওস্পিজা ফর্টিস এর ঠোটের আকার শতকরা ৫ ভাগ কমে গেছে।


প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের অবশ্যই কোন প্রক্রিয়া আছে:



ছবি ৫: ফ্রান্সিস ক্রিকের হাতে আকা ডিএনএ ডাবল হেলিক্সের প্রথম ডায়াগ্রাম। Francis Crick/Courtesy Wellcome Trust (সুত্র: নোভা)।

প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে যে বিবর্তন হচ্ছে ডারউইন তা খুব ভালো করে জানতেন, যে প্রশ্নটার উত্তর তাঁর জানা ছিল না তা হল, কেমন করে সেই প্রক্রিয়াটা কাজ করছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি এর ব্যাখা হিসাবে প্রস্তাব করেছিলেন বংশগতি বা হেরেডিটির একটা পদ্ধতিকে, যার নাম দিয়েছিলেন প্যানজেনেসিস। ভুল প্রমানিত হয়েছিল তার এই প্যানজেনেসিসের ধারনাটি। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপারটা হলো, বংশগতির আসল প্রক্রিয়াটি -জীনতত্ত্ব বা জেনেটিক্স -কিন্তু ডারউইনের জীবদ্দশায় আবিষ্কৃত হয়েছিল, যদিও তিনি তা জেনে যেতে পারেননি। ১৮৬৫ সালে মটরশুটি গাছ নিয়ে গবেষনা করে অষ্ট্রিয়ীয় পাদ্রী গ্রেগর মেন্ডেল কিন্তু জীনতত্ত্বের মৌলিক নিয়মগুলো আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু মেন্ডেলের গবেষনা ১৯০০ সাল পর্যন্ত্য অবহেলিত হয়েছে, তার কাজ প্রকৃত মুল্য পেয়েছে ১৯৪০ এর দশকে যখন বিজ্ঞানীরা জীনের আসল উপাদান ‍ডিএনএ’কে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন ( ছবিতে ফ্রান্সিস ক্রিকের আকা ডিএনএ ডাবল হেলিক্স এর প্রথম স্কেচ)। বর্তমানে জীবিত প্রানীর জেনোমই হলো জীনতত্ত্ব,
 ‍চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই জীনতত্ত্বের বৈপ্লবিক সব গবেষনার কেন্দ্রবিন্দু।


প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া যাই হোক না কেন, তা অবশ্যই প্রাকৃতিক, কোনভাবে
অতিপ্রাকৃত না:



ছবি ৬: ওক গাছে চারা ( ছবি: Alexander Chelmodeev/istockphoto.com(সুত্র: নোভা)

ডারউউন তার বিবর্তন তত্ত্ব প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছেন প্রায় ২০ বছর, যতক্ষন না পর্যন্ত আরেকজন প্রকৃতিবিজ্ঞানী আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস, সম্পুর্ন স্বতন্ত্রভাবে প্রজাতির বিবর্তন সংক্রান্ত ব্যাখ্যায় ঠিক একই ধারনায় উপনীত হন। তার দেরী করার অন্তত একটা কারন ছিল,তিনি জানতেন ধর্মপরায়ন খৃষ্টানদের বিশ্বাসের উপর তার তত্ত্ব কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে । আর এদের মধ্যে একজন ছিলেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী এমা, যিনি বিশ্বাস করতেন যে, পৃথিবীর সমস্ত জীবিত প্রানীকে সম্পুর্ন আর পরস্পরের থেকে পৃথক করে সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বর। বলাবাহুল্য ডারউইনের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো ভিন্ন। বন্ধু টি এইচ হাক্সলী ছিলেন একই মতের, ‘একই ধরনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় যেভাবে বীজ থেকে বৃক্ষ বেড়ে ওঠে, বা ডিম থেকে জন্ম নেয় মুরগী,’ হাক্সলী লিখেছিলেন, ‘বিবর্তন প্রক্রিয়া বিশেষ সৃষ্টি সহ সব ধরনের অতিপ্রাকৃত হস্তক্ষেপের ধারনাকে পরিত্যাগ করে।’ অবশ্যই সারা পৃথিবী বহু মানুষ আজো বিশ্বাস করে সৃষ্টির পেছনে রয়েছে স্বর্গীয় হস্তক্ষেপ।


ভ্রুণতত্ত্ববিদ্যা বা এমব্রায়োলজী হচ্ছে ‘আকৃতির পরিবর্তনের স্বপক্ষে এককভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী শ্রেণীর তথ্যসম্ভার’:



ছবি ৭: মানব ভ্রূন ( ছবি: Clouds Hill Imaging Ltd./CORBIS (সুত্র নোভা)


ডারউইনের মতে নিষিক্ত একটি ডিম্বানু যে পক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বহু সহস্র কোটি কোষের একটি পুর্ণবয়স্ক প্রানীতে পরিনত হয়ে এ বিষয়টি, বিবর্তনের সময়ে কিভাবে প্রাণী এবং উদ্ভিদের মুল অঙ্গ কিভাবে পরিবর্তিত হয়, তা বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। বিজ্ঞানের নতুন শাখা ইভোলুশনারী ডেভেলপমেন্ট বায়োলজী বা সংক্ষেপে যা ‘ইভো ডেভো’ নামে পরিচিত, আজ ডারউইনের এই ধারনার পিছনে সত্যকে দ্রুততার সাথে উন্মোচন করে চলেছে। অতি সম্প্রতিকাল পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কেবল বলতে পারতো আকারের পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু কিভাবে হচ্ছে, সেটি তাদের সঠিক জানা ছিল না। তবে এখন তারা সেটা জানেন, বিস্ময়কর একটা ব্যাপার যদিও, পৃথিবীর সকল প্রানী, অনুজীব থেকে মানুষ (ছবিতে মানুষের ভ্রুন) সবাই একই ধরনের টুল-কিট বা মাষ্টার জীন ব্যবহার করে, যা নিয়ন্ত্রন করে শরীর এবং অন্যান্য অঙ্গ কিভাবে তৈরী হবে এবং ভ্রুণাবস্থায় কখন কোন জীনটা সক্রিয় /নিষ্ক্রিয় বা সুইচ অন/অফ হবে বা কেমন করে তৈরী হবে প্রাণীর শরীর।

যৌন নির্বাচনও বিবর্তন প্রক্রিয়ার একটি চালিকা শক্তি:



ছবি ৮: ছেলে ময়ুর ( ছবি: Bobbie Osborne/istockphoto.com(সুত্র নোভা)।


ডারউইনের কাছে ময়ুর ছিল একটা ধাঁধার মত। কেমন করে অতিআড়ম্বর সম্পন্ন এমন পেখমের উৎপত্তি হলো। কেমন করে এই পেখম প্রজাতির সবচেয়ে সুযোগ্য সদস্যদের বেচে থাকার সংগ্রামে ( survival of the fittest: survival of the fittest বাক্যটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন দার্শনিক হার্বার্ট স্পেন্সার) অবদান রাখতে পারে। ডারউইন এই পশ্নের উত্তর প্রস্তাব করেছিলেন তার The Descent of Man বইটিতে, যেখানে তিনি একটি নতুন ধারনার প্রস্তাবনা করেন: যৌন নির্বাচন, যা ব্যাখ্যা করে প্রানীদের নানা বৈশিষ্ট্যর বিবর্তনে প্রজাতির বীপরিত লিঙ্গের সদস্যরা কিধরনের গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখে। ডারউইন বুঝতে পেরেছিলেন যে আসলে কোন ছেলে ময়ুরের পেখম সবচেয়ে সুন্দর, এ বিষয়ে মেয়ে ময়ুরের পছন্দ বা অপছন্দই সম্ভবত ছেলে ময়ুরদের এমন জমকালো পেখমের কারন। ১৯৯০ এর দশকে নিউক্যাসল-আপন-টাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মারিওন পেট্রি প্রমান করেন যে, আসলেই ডারউইনের অনুমান সঠিক। গড়পড়তায় ছেলে ময়ুরের পেখমে প্রায় ১৫০ টা মত চোখ থাকে, সেখান থেকে কিছু চোখ সরিয়ে ফেললেই ঐ পুরুষ ময়ুরের প্রজনন সুযোগ অনেকাংশে কমে যায়। ১৩০ টা চোখের নীচের পুরুষ কমই পারে প্রজনন সঙ্গী হিসাবে মেয়ে ময়ুরের দৃষ্টি আকর্ষন করে সফল হতে। পেট্রির যুক্তি হলো, যতই একটা পুরুষ ময়ুর স্বাস্থ্যবান হবে ততই সে পেখমের চোখ তৈরীর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় শক্তি বিনিয়োগ করতে পারবে - যে বিষয়টা মেয়ে ময়ুররা নিজেরাই ভালো বুঝতে পারে।

মানুষ সহ প্রত্যেকটি প্রানীর একটি কমন বা সাধারন আদিপ্রানীর বংশধর:



ছবি ৯: অমর জীন ( ছবি: Sean B. Carroll এর The Making of the Fittest: DNA and the Ultimate Forensic Record of Evolution (Norton)থেকে পুনঃঅঙ্কিত (সুত্র: নোভা)।


ডারউইন জানতেন, মানুষ একটা প্রানী মাত্র, তাঁর এমন বক্তব্যে তৎকালীন ভিক্টোরিয় সমাজে ‍‍‍ তেমন কোন গ্রহনযোগ্যতা না পাবার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু তাঁর Origin of species এ তিনি কিন্তু এই বক্তব্যটাকে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে লিখেছিলেন যে, ‘আমি সাদৃশ্য থেকে অনুমান করতে পারি যে, সম্ভবত পৃথিবীর সকল জীব, যারা এই পৃথিবীতে কোন দিনও বেচে ছিল, তারা প্রত্যেকে আদিম কোন জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে, যেখানে জীবনের প্রথম শুরু হয়েছিল।’ তখন থেকেই তার এই ধারনার পক্ষে অনেক স্বাক্ষ্য প্রমান সংগৃহীত হয়েছে আর সবচেয়ে বড় প্রমান এসেছে ইভো ডেভো থেকে। জীবনের তিনটি ডোমেন - আরকীয়া, ব্যাকটেরিয়া এবং ইউক্যারিওট ( প্রানী,উদ্ভিদ, ছত্রাক এবং প্রোটিষ্টরা)- দের জেনোম তুলনামুলক গবেষনায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, মোটামুটি ৫০০ জীন জীবিত সকল প্রানীদের মধ্যে পাওয়া যায়। এই সৃষ্টির শুরু থেকে অমর জীনগুলো টিকে গেছে অপরিবর্তিত রুপে প্রায় ২ বিলিয়ন বছর ( ছবিতে সেরকমই বিভিন্ন জীবের মধ্যে বিদ্যমান একটা প্রোটিন অনুক্রমের অংশ বিশেষ দেখানো হয়েছে, একই অ্যামাইনো এসিডগুলোকে হাইলাইট করা হয়েছে)। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন মিলারের ভাষায়
 ‘অসাধারন জীববৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও, প্রত্যেকটা জীবিত প্রাণীদের মধ্যে প্রায় একই ধরনের অত্যাবশ্যকীয় জীনগুলো বিদ্যমান, যা সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে তাদের উৎপত্তি হয়েছে বিবর্তনের মাধ্যমে একটি সাধারন পুর্বসুরী প্রানী থেকে।’


এইপ’দের (Ape) মত পূর্বপুরুষদের থেকে বিবর্তিত হয়েছে মানুষ :



ছবি ১০: কঙ্কাল ( ছবি: 1863 সালে প্রকাশিত Evidence as to Man's Place in Nature by Thomas Henry Huxley (সুত্র নোভা)


ডারউইনের মনে আশঙ্কা ছিল, যদি তিনি প্রস্তাব করে মানুষ এবং এইপ’দের আদি পুর্বপুরুষ ছিল এক, তাহলে তার সমকালীন সমাজে অনেকেই গভীরভাবে মর্মাহত হতে পারে। স্বভাবতই ডারউইন তার ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত Origin of species এ মানব বিবর্তনের বিষয়টিকে বলতে গেলে প্রায় এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু ১৮৭১ এ Descent of Man এ তিনি এ বিষয়ে তার ধারনাগুলো স্পষ্ট করে তুলে ধরেছিলেন। কোন রাখঢাক না করে লিখেছিলেন, ‘লোমশ, চতুর্পদী,লেজযুক্ত, স্বভাবে সম্ভবত বৃক্ষচারী কোন প্রানীর বংশধর হলো মানুষ’। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের 
মনের সাথে শিম্পান্জ্ঞি বা গরিলার মনের পার্থক্য প্রকারে না বরং প্রকৃতিতে’। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার যা মনে হয় তা হলো, আমাদের অবশ্যই স্বীকার করা উচিৎ, সকল মহান গুনে গুনান্বিত মানুষ, তার শারীরিক কাঠামোতে খুব সাধারন উৎপত্তির অমোচনীয় চিহ্ন বহন করে বেড়ায়’। আজ অনেক স্কুলের ছেলে মেয়েরাই সেই পরিসংখ্যানটি বলতে পারবে, ‍‍যেটি উল্লেখ করা হয় এই মতবাদের স্বপক্ষে জোরালো একটি যুক্তি হিসাবে-যে, বিবর্তনের ধারায় আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী জীবিত প্রানী শিম্পান্জ্ঞি ডিএন এ‘র সাথে আমাদের ডিএনএ’র প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগই মিল (উপরের ছবিটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল টি এইচ হাক্সলের ১৮৬৩ সালে প্রকাশিত Man's Place in Nature এ ছবিটিকে সর্ববামে গিবন ছাড়া সব প্রানীদের কাঠামো আনুপাতিক আকারে আঁকা, গিবনের ছবিটি তার তার আকারের দ্বিগুন অনুপাতে আকা হয়েছে)

আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছে আফ্রিকায়:



ছবি ১১: বিবর্তন বৃক্ষ ( ছবি: Pascal Gagneux et al. 1999. "Mitochondrial Sequences Show Diverse Evolutionary Histories of African Hominoids." Proc. Natl. Acad. Sci. USA ,Vol. 96, pp. 5077-5082, 27 April থেকে পুণঃঅঙ্কিত(সুত্র: নোভা) ।


ডারউইন জীবিত থাকাকালীন সময়ে তেমন কোন আদি মানুষের জীবাশ্ম খুজে পাওয়া যায়নি। যা পাওয়া গেছে তার মধ্যে কিছু ছিল ১৮৫৬ সালে জার্মানীর নিয়ানডার উপত্যকায় খুজে পাওয়া নিয়ানডার্থাল মানুষের জীবাশ্ম । এছাড়াও তখন কেউই সুনিশ্চিৎভাবে সেগুলো কত বছরের পুরোনো তা পরিমাপ করতে পারেনি। কিন্তু শিম্পান্জ্ঞি বা গরিলাদের সাথে আমাদের শারীরিক গঠনের সাদৃশ্য লক্ষ্য করে তিনি অনুমান করেছিলেন যে, Homo spaiens রা বিবর্তিত হয়েছে আফ্রিকায়। তার স্বভাবসুলভ সর্তকতার সাথে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমাদের পু্র্বপুরুষদের উৎপত্তি, অন্য কোন স্থান থেকে আফ্রিকা মহাদেশে হবার সম্ভাবনাই বেশী’।বর্তমানে সুপরিচিত লুসি শুধুমাত্র, মানুষ বা মানুষের মত প্রজাতিদের
 অসংখ্য আবিষ্কৃত জীবাশ্মদের একটি মাত্র, যাদের বেচে থাকার সময়কাল এবং বৈশিষ্ট্য তার ধারনাকে প্রমান করেছে, মানুষের প্রথম আবির্ভাব হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশে। (উপরের ছবিতে ১৯৯৯ সালের ডিএনএ সাদৃশ্যর উপর ভিত্তি করে আঁকা একটি বিবর্তন বৃক্ষ যা প্রমান করেছে আমরা মানুষসহ পাচটি গ্রেট এইপ পরিবার একটি সাধারন পুর্বপুরুষ থেকে উদ্ভব হয়েছিল। ডায়াগ্রামে শাখার দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে প্রত্যেকটি প্রানীদের জনগোষ্ঠী তাদের নিকটবর্তী স্বজনদের থেকে কতটুকু আলাদা হয়েছে তাদের মাইটোকাইন্ড্রয়াল জীনের অনুক্রমে)।


পৃথিবীর বয়স কম করে হলেও কয়েকশ মিলিয়ন বছর:



ছবি ১২: পৃথিবী ( ছবি: Andrew Johnson, istockphoto.com (সুত্র:নোভা)।


১৬৫৮ সালে আইরিশ পাদ্রী জেমস আশার, বাইবেল এবং তার পঠিত ঐতিহাসিক রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে ঘোষনা দেন, খৃষ্টপূর্ব ৪০০৪ এর অক্টোবর মাসের ২২ তারিখ ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। ডারউইনের সমসাময়িক ভুতত্ত্ববিদরা এর তীব্র বিরোধীতা করে বললেন, প্রমান সহ যুক্তি দিলেন যে পৃথিবীর বয়স আরো অনেক বেশী। ডারউইন, বিবর্তনের জন্য প্রয়োজন মাত্র ছয় হাজার বছরের চেয়ে আরো অনেক বেশী পরিমানএকটা যে সময় দরকার, এই বিষয়টি জানতেন, এবং ভুতত্ত্ববিদদের সাথে বিষয়টি সম্বন্ধে এক মত পোষন করেন। Origin of Species এর প্রথম সংস্করনে তিনি আমাদের গ্রহটি বয়স কমপক্ষে কয়েকশ মিলিয়ন বছর হবে বলে হিসাব করেছিলেন। আসলে, এখন আমরা সবাই জানি পৃথিবী আরো বেশী প্রাচীন। ১৯০০’র দশকে, মারি এবং পিয়ের কুরী তেজক্রিয়তা আবিষ্কার করার পর, পদার্থবিদরা ইউরনিয়ামের হাফ লাইফ এবং আরো কয়েকটি তেজক্রিয় মৌল উপাদান ব্যবহার করে পাথরে বয়স নির্ণয়ের কৌশলও উদ্ভাবন করেন। পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীনতম খনিজ পদার্থের বয়স প্রায় ৪.১ থেকে ৪.২ বিলিয়ন বছর, যা প্রমান করে পৃথিবীর বয়স এর চেয়ে কম হতে পারে না। কিন্তু উল্কাপিন্ড, বিজ্ঞানীরা যাদের মনে করেন পৃথিবী সৃষ্টির সমসাময়িক সময়ে সৃষ্ট হয়েছিল, কিন্তু ভুতাত্ত্বিকভাবে যারা নিষ্ক্রিয়, ফলে তারা তাদের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার প্রমান এখনও বিদ্যমান, সেই উল্কাপিন্ডের উপরে বয়স পরিমাপের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে বার বার বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর মোটামুটি একই বয়স পরিমাপ করেছেন - তা হলো প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর। বর্তমানে এটাই পৃথিবীর বয়স হিসাবে বেশী স্বীকৃত।


জীবাশ্ম রেকর্ডের ফাকা জায়গাগুলো পুরণ করবে গুরুত্বপুর্ণ ট্রান্জিশনাল (মধ্যবর্তী বা ক্রান্তিকালীন) জীবাশ্মগুলো:



ছবি ১৩: আর্কিওপটেরিক্স ( ছবি: Louie Psihoyos/CORBIS (সুত্র:নোভা)


তার নোটবুকে, সেই সময়ে জীবাশ্ম রেকর্ডের মধ্যে বিদ্যমান ফাকা জায়গাগুলো নিয়ে ডারউইন চিন্তার কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন, ‘যেন কোন বই থেকে পাতা ছিড়ে ফেলা হয়েছে’। সম্ভবত সবচেয়ে বড় ফাকা জায়গাটা ছিলো ক্যামব্রিয়ান পিরিওডের (৫৪৪-৫১৪ মিলিয়ন 
বছর আগে) আগে কোন জীবাশ্ম খুজে না পাওয়ার ব্যাপারটা, ‘কেন আমরা ক্যামব্রিয়ান সিস্টেমেরও আরো আগের পিরিওডের জীবাশ্ম সমৃদ্ধ ডিপোসিট খুজে পাচ্ছিনা, এই প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক উত্তর আমার জানা নেই’ তিনি লিখেছিলেন। যদি তার তত্ত্ব সঠিক হয়,তিনি জানতেন এই সব ফাকা জায়গাগুলো ভবিষ্যতে কোন এক সময় পুর্ণ হয়ে যাবে। গত অর্ধ শতাব্দীতে কেবল মাত্র জীবাশ্মবিদরা প্রি-ক্যামব্রিয়ান পিরিওডের জীবাশ্ম খুজে পেতে শুরু করেছেন এবং এই জীবাশ্ম’র পরিমান বিশাল এবং ক্রমাগতই তা বাড়ছে। বর্তমানে সবচেয়ে প্রাচীন জীবাশ্মর বয়স প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর। এছাড়াও জীবাশ্মবিদরা একের পর এক খুজে বের করছেন গুরুত্বপুর্ন সেই সব ট্রান্জিশনাল ফসিল গুলো যা গুরুত্বপুর্ন বিবর্তনের নানা পর্বগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী করেছে এবং ডারউইনের সময়ে যাদের অনুপস্থিতি তাকে চিন্তিত করেছিল (যেমন: ছবিতে এখানে একটি আর্কিওপটেরিক্স এর জীবাশ্ম)।


এক ফুট লম্বা কোন পতঙ্গ নিশ্চয়ই আছে এই অর্কিডের পরাগায়ন করার জন্য:



ছবি ১৪: অ্যানগ্রেকাম সেসকিপেডালী (Angraecum sesquipedale, মাদাগাস্কার স্টার অর্কিড (ছবি: 2004 Prem Subrahmanyam, www.orchidstockphotos.com (সুত্র:নোভা)

ডারউইনের ধারনাগুলোর মধ্যে সবগুলোই যে বড় পরিসরের বা পৃথিবী কাপানো, তা কিন্তু না, কিছু কিছু ছিল খুব সাধারন ভবিষ্যদ্বানী। মাদাগাস্কারের অ্যানগ্রেকাম সেসকিপেডালী (Angraecum sesquipedale) নামের অর্কিড প্রজাতির কথাই ধরুন ( যা মাদাগাস্কার স্টার অর্কিড নামেও পরিচিত)। ১৮৬২ সালে তিনি যখন এই অর্কিডটি প্রথম দেখেন, আর সবার মত এর স্পারটির দৈর্ঘ্য দেখে অবাক হয়ে যান (ছবিতে পেছনে সরু সবুজ নালীটিকে দেখুন)। এই অর্কিডটি তার ফুলের পেছনে একটা লম্বা স্পার বা মধুথলি তৈরী করে যার দৈর্ঘ্য
 এক ফুটেরও বেশী (২০-৩৫ সেমি) (ল্যাটিন ভাষায় সেসকিপেডাল মানে দেড় ফুট) এবং এই স্পারের একেবারে তলদেশে এটি নেক্টার বা ফুলের মধু তৈরী করে। ‘আশ্চর্য্য’, তিনি লিখেছিলেন, ‘কোন পতঙ্গ এই মধুথলীর মধু পান করতে পারে?’ মন্তব্য করেন, এখনো আবিষ্কার হয়নি এমন কোন পতঙ্গ নিশ্চই আছে যার এক ফুট দীর্ঘ জিহবা আছে, যা দিয়ে এই লম্বা মধুথলীর মধু খেতে পারে। তার সমসাময়িক কীটপতঙ্গবিদরা সন্দিহান ছিলেন বিষয়টি নিয়ে, কারন ‍সেরকম কোন পতঙ্গতো পাওয়া যায়নি। ডারউইন বিশ্বাস করতেন যে ফুলের অতিআড়ম্বরপুর্ণ রং কিংবা আকার বিবর্তিত হয়েছে মানুষের সন্তুষ্টির জন্য না বরং পরাগায়নের জন্য পতঙ্গদের আকর্ষন এবং তাদের নিজেদের সফল বংশবিস্তারের কৌশল হিসাবে। যে পরিচিত কৌশল ডারউইন শনাক্ত করেছিলেন, তা হলো ফুলের মধু খাওয়ার সময় ফুল পতঙ্গের পায়ে ফুলের আঠালো রেণু লাগিয়ে দেয়া। সুতরাং ডারউইন প্রস্তাব করেছিলেন, মাদাগাস্কারের জঙ্গলে কোথাও না কোথাও কোন এমন কোন পতঙ্গ বাস করে যার জিহবা যথেষ্ট পরিমান দীর্ঘ,অ্যানগ্রেকাম সেসকিপেডালী’ এর লুকোনো মধু পান করার জন্য। যখনই এই রহস্যময় পতঙ্গটি তার দীর্ঘ জিহবা প্রবেশ করে ফুলের গায়ে চেপে বসে মধু পান করে, ফুলের রেণু তখন তার শরীরে মেখে যায়, যা ফুলটি পরাগায়নে সহায়তা করে। তার মৃত্যুর একুশ বছর পর তার ভবিষ্যদ্বানী সফল হয়, যখন মাদাকাস্কারের জঙ্গলে বিজ্ঞানীরা খুজে পান দীর্ঘ জিহবার সেই পতঙ্গ, ডারউইনের ভবিষ্যদ্বানীকে সন্মান করে এটির নামকরন করা হয় জ্যানথোপ্যান মরগানী প্রেডিক্টা (ছবি ১৪ -১৫), একমাত্র এই মথটি পারে এই অর্কিডের পরাগায়ন করতে। আরো একবার তার কথা সঠিক প্রমানিত হলো।



ছবি ১৫:অ্যানগ্রেকাম সেসকিপেডালী’র দীর্ঘ স্পার আর লম্বা জিহবার জ্যানথোপ্যান মরগানী প্রেডিক্টা মথ (ডারউইন হক মথ)(সুত্র: http://ny-image2.etsy.com/il_fullxfull.170731606.jpg)




ছবি ১৬: জ্যানথোপ্যান মরগানী প্রেডিক্টা মথ,অর্কিডটির পরাগায়নের জন্য একমাত্র এই প্রাণীটি সক্ষম।সুত্র: http://blog.thaumatography.net/wp-content/uploads/2010/11/xanthodom.jp


লেখাটি শেষ করি তাঁর Origin of species থেকে একটি পংক্তি দিংয়ে:

There is grandeur in this view of life, with its several powers, having been originally breathed into a few forms or into one; and that, whilst this planet has gone cycling on according to the fixed law of gravity, from so simple a beginning endless forms most beautiful and most wonderful have been, and are being, evolved.
সূত্র প্রথম আলো ব্রগ, লেখক কাজী মাহবুব হাসান

No comments:

Post a Comment