Accounting

হিসাববিজ্ঞানে ভাল রেজাল্টে আগ্রহী
এস.এস.সি , এইচ.এস.সি ও অনার্সের হিসাববিজ্ঞান নিয়ে সমস্যা আছে...
দেরী না করে নিচের লিংকে ক্লিক কর

Honours & Masters Result

নিচের লিংকে ক্লিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট পেয়ে যাবে

রাশিফল জানতে চান?

তাহলে এখনি নিচের লিংকে ক্লিক করে আপনার রাশি সম্পর্কে জেনে নিন। ২০১২ সালটি আপনার কেমন যাবে জানতে এখনি ক্লিক করুণ.....

Friday, October 7, 2011

যে কারণে স্টিভ জবস গুরুত্বপূর্ণ



‘সময়ের সঙ্গে কখনো কখনো এমন সৃষ্টি এসে হাজির হয় যা ঘুরিয়ে দেয় ইতিহাসের চাকা। কোনো ব্যক্তি যদি তার কর্মসূত্রে এমন একটিও যুগান্তকারী উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন তবে তিনি অসম্ভব ভাগ্যবান। অ্যাপলে আমাদের সুযোগ হয়েছে যুগ পাল্টে দেয়া এমন একাধিক পণ্য নিয়ে কাজ করার।
১৯৮৪ সালে আমরা নিয়ে আসি ম্যাকিন্টস। এটা কেবল অ্যাপলকে বদলে দেয়নি, এটা পুরো কম্পিউটার শিল্পকেই বদলে দিয়েছিল। ২০০১ সালে আমরা নিয়ে আসি আইপড। এটা যে কেবল আমাদের গান শোনার অভ্যাস বদলে দিয়েছে তা নয়, এটা পুরো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ধরন পাল্টে দিয়েছে। আজ আমরা এমনই একটি দিনে হাজির হয়েছি। আজ আমরা নতুন করে টেলিফোন আবিষ্কার করবো...’

ওপরের কথাগুলো স্টিভ জবস বলেছিলেন ২০০৭ সালে আইফোন লঞ্চ করার অনুষ্ঠানে। নূন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তিমাত্রই জানেন বর্তমান টেলিকম বিশ্বে অ্যাপ্লিকেশন বেইজড যে মোবাইল যুগ চলছে সেটি শুরু হয়েছিল আইফোনের ‘স্পর্শেই’।


আইফোনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই ‘যুগ পাল্টে দেয়া’ প্রযুক্তির কৃতিত্ব স্টিভ জবস অ্যাপল নামের প্রতিষ্ঠানকে দিলেও, যারা এই টেকনোলজি জায়ান্ট সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা ঠিকই জানেন এর পুরো কৃতিত্ব দলনেতা এবং গুরু হিসেবে স্টিভ জবস-এর। একজন মানুষ কীভাবে একটি যুগের গতিপথ তৈরি এবং পরিচালনা করতে পারেন তার সর্বশেষ উদাহরণ স্টিভেন পল জবস, কাছের লোকজনের কাছে যার নাম ছিলো স্টিভ।
কথিত আছে, ১৯৭৬ সালে নিজেদের বাড়ির গ্যারেজে বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াক-এর সঙ্গে কাজ করার সময় ওজনিয়াক বেঁকে বসেছিলেন এই বলে যে, টেবিলে বা ডেস্কে সেট করা যাবে এমন কম্পিউটার বানানো সম্ভব নয়। জবাবে স্টিভ বলেছিলেন, ‘ওজ, আমি জানি এটা করা সম্ভব এবং তুমিই সেটা পারবে’। এই ধারাবাহিকতাতেই এসেছিলো অ্যাপল ম্যাকিন্টস। জবস ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন, ইলেকট্রিক ক্যাপাসিটরভিত্তিক সার্কিটের যে ভবিষ্যৎ এবং ওজনিয়াকের ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে যে জ্ঞান তাতে ডেস্কটপ কম্পিউটার কল্পনার কোনো বিষয় নয়। এই দূরদৃষ্টিই স্টিভকে আলাদা করে দেয় অন্য যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে। অন্যরা যেখানে অর্থিক লাভের ভবিষ্যত দেখেন, স্টিভ সেখানে দেখেছেন যুগ নির্ধারণ করে দেয়া প্রযুক্তি।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে যদি মূল্যায়ন করতে হয়, তবে একটি উপমা সম্ভবত যুক্তিযুক্ত হবে। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ইভেন্টে যদি একজন অ্যাথলেটকে মাঝপথে ট্র্যাক থেকে বের করে দিয়ে তারপর আবার দৌড়াতে বলা হয়, আর ওই দৌড়বিদই যদি শেষ পর্যন্ত সোনার মেডেলটি জিতে নেন, তবে তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব? ঠিক একই ধরনের ঘটনার উদাহরণ ছিলেন স্টিভ নিজেই।

নিজে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবেন বলে অ্যাপলে স্টিভ নিয়ে এসেছিলেন পেশাদার একজন সিইও। সেই পেশাদার ব্যক্তি অ্যাপলে এসেই ক্ষমতার পেশাদারী লড়াই আর বোর্ডরুম পলিটিক্সে নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে সিইওর ক্ষমতাবলে চাকরিচ্যুত করেন প্রতিষ্ঠাতাকেই। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৫ সালে। তখন স্টিভের বয়স ৩০, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপল টু কম্পিউটার তখন বাজার মাত করেছে আর ব্যক্তি জীবনে স্টিভ তখন মাত্রই বিয়ে করেছেন।

এরপর মাত্র এক দশকের মাথায় বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি অ্যাপল লোকসান দিতে দিতে দেউলিয়া হবার উপক্রম হয়। ১৯৯৭ সালে আবার তাকে অ্যাপলে ফিরিয়ে আনা হয় এবং এরপর স্টিভ শুন্য থেকে আবার অ্যাপল গড়ে তুলতে শুরু করেন। এরই মাঝে তিনি তৈরি করেন পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও এবং সফটওয়্যার কোম্পানি নেক্সট।

১৯৯৭ থেকে ২০১১ এই ১৪ বছরে স্টিভ জবস অ্যপলকে শুন্য থেকে গড়ে তোলেন বিশ্বের ১ নম্বর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে। আর বিশ্বাব্যপী ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যাপল পৌছায় দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা হিসেবে স্টিভ অ্যাপলের দুটি প্রধান ধারা সেট করে নেন। একটি হলো পুরোনো কর্মক্ষেত্র অর্থাৎ কম্পিউটার আর দ্বিতীয়টি হলো ইলেকট্রনিক ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা। ২০০১ সালে আইপডের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় আসে অ্যাপল। এরপর এতে যোগ হয় আইটিউনসভিত্তিক গানের ব্যবসা এবং এরপর যোগ হয় অ্যাপল টিভি এবং আইফোন। সেইসঙ্গে আসে আইফোন আইপড এবং আইপ্যাডভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবসা। মূলত এর পরপরই অ্যাপলের আর্থিক অবস্থার দিগন্ত ক্রমশ বিস্তৃত হতে শুরু করে।

যাত্রার শুরু থেকেই অ্যাপল পণ্যে প্রোডাক্ট ডিজাইন বিবেচিত হতে থাকে অসম্ভব গুরুত্বের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন বিভাগের প্রধান জনি আইভ যুক্ত আছেন প্রায় ১৫ বছর যাবত। তিনি অ্যাপল পণ্যের ডিজাইন সম্পর্কে বলেছিলেন, একটি ভালো ডিজাইন মানে হলো যতো কম ‘ডিজাইন’ সম্ভব। মুলত ডিজাইন বিষয়ে স্টিভের দৃষ্টিভঙ্গিও ছিলো একই। কোনোরকম বাহুল্যহীন ডিজাইনের পণ্য- যা কাজ করবে চমৎকারভাবে। অ্যাপল পণ্যে এই থিমটিই প্রতিষ্ঠা করে গেছেন স্টিভ।

ব্যক্তি জীবনেও একই ফিলসফি দেখতে পাই আমরা। নিজের ক্যারিশমা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠানকে, বিনিময়ে বেতন নিয়েছেন বছরে ১ ডলার। প্রভাবশালী সংবাদ সময়িকী টাইম-এ ৭বার প্রচ্ছদে এসছেন স্টিভ জবস, অথচ এ নিয়ে স্টিভ বা তার  প্রতিষ্ঠান নীরবতা পালন করেছেন বরাবরই। এমনকী অ্যাপল যখন আর্থিক ক্ষমতায় মাইক্রোসফট বা খোদ মার্কিন সরকারের আর্থিক ক্ষমকাতেও টপকে যায়, তখনো স্টিভ বিনয়ী আচরণ করেছেন।

এ বছরই ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর প্রযুক্তি সম্পাদক ওয়াল্ট মসবার্গ এক সাক্ষাৎকারে স্টিভকে জিজ্ঞেস করেন, অ্যাপলের মোট সম্পদের পরিমাণ মাইক্রোসফটকে ছাড়িয়ে গেছে, এ বিষয়ে আপনার অনুভ‚তি কী? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘দুটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আর্থিক ক্ষমতা দিয়ে মাণ নিধারণ করা সম্ভব নয়। হ্যাঁ, ব্যবসায় লাভ হয়তো এক ধরনের ভালোলাগার জন্ম দেয়, কিন্তু সেটি কখনোই গুরুত্বপূর্ণ নয়। অ্যাপল সবসময় চেয়েছে ‘ইসসেনলি গ্রেট’ পণ্য তৈরি করতে এবং অ্যাপল সবসময় সেটিই করবে।’
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যখন সিএসআর বা কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটি ফলাও করে প্রচার করে, সেখানেও স্টিভ অবম্ভব নিরব হয়ে বিনয়ী। এই বছরই নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় আকারে একটি আর্টিকেল ছাপা হয় যাতে প্রশ্ন করা হয়েছিলো বিল গেটসের বেলায় যেমনটা জানা যায় তিনি জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ ব্যায় করেন, স্টিভ জবসের বেলায় তেমন শুনতে পাই না কেন? এই প্রশ্নটির উত্তর অ্যাপল বা স্টিভ জবস দেননি, দিয়েছিলেন মিউজিক্যাল ব্যান্ড ইউটু-র ভোকালিস্ট এবং আফ্রিকায় মানবউন্নয়ন কর্মী বনো।

ওই আর্টিকেলটি ছাপা হবার পরের দিনই বনো একটি চিঠি পাঠান নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায়। সেখানে তিনি বলেন, স্টিভ জবস রঙ্গিন আইপড-এর মডেলগুলো তৈরি করেছিলেন চ্যারিটির কথা মাথায় রেখেই। তিনি বিশেষ একটি মডেলের রঙ্গিন আইপড-এর লাভের পুরো টাকা দিয়েছিলেন আমার প্রতিষ্ঠিত চ্যারিটি সংস্থায়।’ বনো বলেছিলেন, ‘স্টিভ অন্য রঙ্গিন মডেলগুলোর লাভের অর্থ কোন প্রতিষ্ঠানে কতো দান করছেন তা আমি বলতে পারছি না, তবে আমি জানি আমার প্রতিষ্ঠানে তিনি কতো মিলিয়ন ডলার দান করেছেন।’

বিশ্বের বেশিরভাগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যখন মার্কেটে চলতি চাহিদা অনুসারে পণ্য তৈরি করেছে, তখন স্টিভ হেটেছেন উল্টো পথে। তিনি একেবারে নতুন ধারণার পণ্য প্রবর্তণ করেছেন এবং তারপর সেই পণ্যটির চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ কথাটি সত্যি ডেস্কটপ কম্পিউটার, আইপ্যাড, আইফোন এমনকি হালের আইপ্যাড সম্পর্কেও। মানুষ কোন প্রযুক্তি অবচেতনভাবেই পেতে চায় সেটি অনুমান করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিলো স্টিভ জবসের।

‘বাট দেয়ার্স জাস্ট ওয়ান মোর থিং’- ঠিক এই কথাটিই বলতেন স্টিভ। নতুন কোনো পণ্য সম্পর্কে মঞ্চে বক্তৃতা দেয়ার সময় স্টিভ বরাবরই একটি শেষ চমক রাখতেন। তার জাদুকরি প্রেজেন্টেশনের শেষের এই চমকটির জন্যও একধরনের আগ্রহও কাজ করতো দর্শকদের মধ্যে। এর ফলে শেষের বছরগুলোতে স্মিত হেসে স্টিভ যখন বলতেন 'দেয়ার্স জাস্ট ওয়ান মোর থিং' গোটা অডিটোরিয়াম করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠতো। উপস্থিত সবাই জানতেন সবচেয়ে বড় চমকটিই আসছে এখন।

আজকের বাস্তবতা হলো কেউ আর বলবেন না, আরো একটি বিষয় বাকী আছে। ব্লু জিন্স, টার্টলনেক টিশার্ট আর স্নিকার পরে এসে কেউ আর হাসি মুখে মঞ্চে এসে দাঁড়াবেন না। অসম্ভব আত্মবিশ্বাস নিয়ে কেউ বলবেন না, ‘গুড মর্নিং, উই হ্যাভ সাম ওয়ান্ডাফুল থিংস টু শেয়ার উইথ ইউ টুডে!’





বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

No comments:

Post a Comment