Accounting

হিসাববিজ্ঞানে ভাল রেজাল্টে আগ্রহী
এস.এস.সি , এইচ.এস.সি ও অনার্সের হিসাববিজ্ঞান নিয়ে সমস্যা আছে...
দেরী না করে নিচের লিংকে ক্লিক কর

Honours & Masters Result

নিচের লিংকে ক্লিক করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স ও মাস্টার্স এর রেজাল্ট পেয়ে যাবে

রাশিফল জানতে চান?

তাহলে এখনি নিচের লিংকে ক্লিক করে আপনার রাশি সম্পর্কে জেনে নিন। ২০১২ সালটি আপনার কেমন যাবে জানতে এখনি ক্লিক করুণ.....

Friday, July 5, 2013

দেড় শ বছর আগে বাঙালির অস্ট্রেলিয়া অভিযান

  • সামিয়া খাতুন ও তাঁর আবিষ্কৃত বাংলা বরফে লেখা কাসাসুল আম্বিয়াসামিয়া খাতুন ও তাঁর আবিষ্কৃত বাংলা সামিয়া খাতুন ও তাঁর আবিষ্কৃত বাংলা বরফে লেখা কাসাসুল আম্বিয়াসামিয়া খাতুন ও তাঁর আবিষ্কৃত বাংলা বরফে লেখা কাসাসুল আম্বিয়া
  • দক্ষিণ এশিয়া থেকে এভাবেই উট নিয়ে যাওয়া হতো অস্ট্রেলিয়ায় দক্ষিণ এশিয়া থেকে এভাবেই উট নিয়ে যাওয়া হতো অস্ট্রেলিয়ায়
অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীরা নদীটির নাম দিয়েছিল ডার্লিং রিভার। বাংলা করলে দাঁড়ায় প্রিয়তমা নদী। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি নদী, নাম তার মারি। বাঙালির অস্ট্রেলিয়া অভিযানের সঙ্গে এই দুই নদীর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। এই শতক বা তার আগের শতক নয়। একেবারে উনিশ শতকে বাঙালি অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল। নাবিক পেশার সূত্র ধরে হকার-পাচক-সার্কাসের কৌতুক অভিনেতা থেকে শুরু করে একেবারে উটের ব্যবসাও করেছে তারা। কিন্তু বাংলায় উট কোথায়।
কীভাবেই তারা এত বিশাল জ্যান্ত প্রাণী ৫০০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, পার্থ ও ব্রোকেন হিলে যেত, সেই আখ্যান খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইতিহাসের গবেষক সামিয়া খাতুন।
উটের গ্রিবা জীবনানন্দের কবিতার উপমায় ঠাঁই পাওয়ার আগেই ১৮৭০-এর দিকে জাহাজে করে বাঙালিরা পৌঁছেছিল অস্ট্রেলিয়া মুলুকে। সেখানকার বড় বড় শহরে একসময় বাঙালিরা গিজগিজ করত বলে সামিয়া খাতুন ইতিহাসের নাড়িনক্ষত্র টেনে টেনে জেনেছেন। বাঙালির সমুদ্রপথে দুস্তর পারাপারের এই অভিযানের ইতিহাস জানার সূত্রপাত ঘটেছিল অবশ্য একটি পুঁথিকে কেন্দ্র করে। ২০০৯ সালের জুনে সামিয়া খবর পান ব্রোকেন হিলের এক আদিবাসী গ্রামে একটি মসজিদ রয়েছে। সেখানে নাকি পুরোনো একখানা কোরআন শরিফও রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে মসজিদের চাবি নিয়ে সামিয়া কোরআন শরিফটি যে বাক্সে রাখা, তার কাছে যান। মোড়কের ওপর ইংরেজিতে ‘দ্য হলি কোরআন’ লেখা দেখে প্যাকেট খুলেই আশ্চর্য হয়ে যান সামিয়া। এ তো দেখি বাংলা বরফে লেখা কাসাসুল আম্বিয়া।
দক্ষিণ এশিয়া থেকে এভাবেই উট নিয়ে যাওয়া হতো অস্ট্রেলিয়ায়
দক্ষিণ এশিয়া থেকে এভাবেই উট নিয়ে যাওয়া হতো অস্ট্রেলিয়ায়

এই অবাক দৃশ্য অনুসন্ধিৎসা করে তোলে সামিয়াকে। অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালিদের পদচারণ অর্ধশতকেরও কম—এমনটাই ছিল এত দিনকার ধারণা। কিন্তু বইটির প্রকাশকাল লেখা আছে ১৮৮৭। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া এই বাংলা পুঁথি অস্ট্রেলিয়ার মরু শহর ব্রোকেন হিলে আগমনের ইতিবৃত্ত জানার বিষয়টিকেই নিজের পিএইচডি গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত করেন। এ বছরই মাত্র ৩১ বছর বয়সে সামিয়া তাঁর পিএইচডি গবেষণাটিও শেষ করেছেন। সামিয়ার নামের আগে ডক্টর তকমা লাগার পাশাপাশি বাঙালির অস্ট্রেলিয়া অভিযানের এক অধ্যায়ও ইতিহাসের বুকে ঠাঁই পেয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ইতিহাস মহাফেজখানা থেকে শুরু করে পুলিশ বিভাগের রেকর্ড ও পুরোনো সংবাদপত্র ঘেঁটে সামিয়া একে একে জানতে পেরেছেন বাঙালিদের ওই অজানা-অচেনা দেশে বিচরণের চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাঙালির দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপ অভিযানের মতোই অস্ট্রেলিয়া অভিযানের শুরুটাও একই রকমের ছিল। অর্থাৎ, ব্রিটিশ জাহাজের লস্কর বা নাবিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বন্দরগুলোর কাছাকাছি এসেই সমুদ্রে ঝাঁপ দিতেন তাঁরা। উত্তাল-ভয়াল সমুদ্র জয় করে তাঁরা ওই ডার্লিং নদী সাঁতরে সিডনি, পার্থসহ বিভিন্ন বন্দরনগরে গিয়ে উঠতেন। অনেকে সেখানকার আদিবাসী নারীদের বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসতিও গড়ে নিয়েছিলেন। অনেকে সেখানে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পান। কেউ বা সার্কাস দলের সদস্য, আবার কেউ বা রাঁধুনি হিসেবে সুনাম কুড়ান। সামিয়ার গবেষণায় উনিশ শতকে অস্ট্রেলিয়ায় বসত গড়া এমন অনেক বাঙালির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ বিষয় নিয়ে করা সামিয়ার পিএইচডি গবেষণার নাম ‘কানেকশনস বিটুইন সাউথ এশিয়া অ্যান্ড অস্ট্রেলিয়া: ক্যামেলস, শিপস অ্যান্ড ট্রেইনস: ট্রান্সলেশন অ্যাক্রস দি ইন্ডিয়ান আর্কেপেলাগো, ১৮৬০-১৯৩০’।
কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ওই জাহাজগুলোতে বিপুলসংখ্যক বাঙালি নাবিক যোগ দেন। বাঙালি নাবিকদের অনেকেই তখন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বন্দরনগরে নেমে থেকে যান। অনেকে জাহাজ কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন উপকূলীয় শহরে গিয়ে ঠাঁই নেন। সেই ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই শুরু হয় বাঙালিদের অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন।
১৯০৭ সালের ৩ ডিসেম্বর আজাদ উল্লাহ নামের এক বাঙালি নাবিক তাঁর সহকর্মী আবদুল্লাহর হামলায় মারা যাওয়ার ঘটনাও ওই সময়টার অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বিভাগের নথিতে পাওয়া গেছে। ১৮৮২ সালে মেলবোর্নের রাস্তায় দরবেশ নামের একজন খুদে ব্যবসায়ী সম্পর্কেও তথ্য রয়েছে সেখানকার সিটি করপোরেশনের নথিতে। ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ কলোনি পোর্ট হের্টল্যান্ডে আবদুল আজিজ নামের এক বাঙালি পাচকেরও খোঁজ পান সামিয়া। খাজা মোহাম্মদ বক্সের জীবনীতে পাওয়া যায়, ১৯০৪ থেকে ১৯০৫ সালের মধ্যে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী ৩০ জন বাঙালি কাপড় ব্যবসায়ীর দেখা পেয়েছেন, যাঁরা জাহাজ থেকে লাফ দিয়ে সাঁতার কেটে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। তাঁরা পার্থ শহরের একটি ভবনকে মসজিদ হিসেবেও ব্যবহার করতেন।
বক্সের জীবনীতে আরও জানা যায়, ১৮৯৩ সালে বাংলা ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চল এবং চীনা ব্যবসায়ীদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সরকার হকারদের জন্য আলাদা লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে। এর পর থেকে হকারদের সংখ্যা কমতে থাকে। তবে এতে বাঙালি হকাররা অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে যাননি। তাঁরা ভিন্ন এক পেশার সন্ধান পান। উটের ব্যবসার শ্রমিক হিসেবে তাঁরা কাজ শুরু করেন।
১৮৮০ সালে অস্ট্রেলিয়ার মরু এলাকা ব্রোকেন হিলে বিপুল পরিমাণে খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়। ওই খনিজ পরিবহনের জন্য তখন ব্রোকেন হিল থেকে পিরি বন্দর পর্যন্ত ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছিল। সড়ক বা জল কোনো পথ দিয়েই এত বিপুল পরিমাণ নির্মাণসামগ্রী পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। ইন্ডিয়ান আর্কেপেলাগোর পথ দিয়ে যাতায়াতকারী ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা অস্ট্রেলিয়ার ওই মরুরাজ্যে উট নিয়ে আসেন। ওই উট দিয়ে রেলপথের কাঁচামাল সরবরাহের কাজ শুরু হয়।
ব্রোকেন হিল প্রোপ্রাইটর লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান তখন জাহাজে করে সিলভারসহ রেললাইন নির্মাণসামগ্রী আমদানির কাজ পায়। তারা কলকাতা বন্দরকেন্দ্রিক ব্রিটিশ কোম্পানি পিঅ্যান্ডও এবং ওএসএনের মাধ্যমে ওই পণ্য পরিবহনের দায়িত্ব দেয়।
ব্রোকেন হিলে রেললাইন নির্মাণ করতে গিয়ে পণ্য পরিবহনের জন্য উটের ব্যবহার শুরু হয়। তখন কলকাতা বন্দর থেকে আফগান, পাকিস্তানি ও বোম্বে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা উটের বহর নিয়ে হাজির হতেন। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মিলনস্থল হিসেবে চিহ্নিত ‘ইন্ডিয়ান আর্কেপেলাগো’ দ্বীপমালা অনুসরণ করে ভারত মহাসাগর দিয়ে জাহাজগুলো যেত।
করাচিতে জন্ম নেওয়া খান জাদা ও বোম্বের ব্যবসায়ী খাজা মোহাম্মদ বক্স ওই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার উটের বাজারে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে আবির্ভূত হন। তাঁরা পূর্ববাংলার এক ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন এস এস বেঙ্গল নামের একটি জাহাজ ভাড়া নিয়ে নিয়মিতভাবে অস্ট্রেলিয়ায় উট নিয়ে যেতেন। ওই এস এস বেঙ্গলের নাবিকদের বড় অংশ ছিলেন পূর্ববাংলার অধিবাসী। ওই জাহাজে করে বিপুল পরিমাণে বাঙালি নাবিক অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেয়। কথিত আছে, খান জাদা ও খাজা মোহাম্মদ বক্স বাঙালি নাবিকদের অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রবন্দর থেকে শহরে পালিয়ে যেতে সহায়তা করতেন। এভাবে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিরা ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রোকেন হিলের স্থানীয় ইতিহাসের মহাফেজখানা থেকে জানা যায়, ওই সময়কার বুর্কি, মেনেনডি ও উইলকানিয়া শহরে অনেক বাঙালি খুদে ব্যবসায়ীদের দেখা মিলত। স্থানীয় এক ঐতিহাসিক মোহামেট আনামেক (সম্ভবত নামটি বিকৃত হয়ে গেছে) নামের এক বাঙালি সার্কাস দলের সদস্য হিসেবে বিপুল খ্যাতি পেয়েছিলেন।
আজ থেকে দেড় শ বছর আগে বাঙালির ভাগ্যান্বেষণে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেওয়ার এই অজানা কাহিনির কথক সামিয়া খাতুনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য কী। ৩১ বছর বয়সে পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়া সামিয়া অকপটে বলেন, ‘এত দিন আমরা কোন কোন দেশের লোকেরা বাংলা অঞ্চলে এসেছিল, সেই ইতিহাস জানতাম। এখন আমরা খবর পাচ্ছি দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অনেক দূরদূরান্তের দেশে বাঙালিরা দেড়-দুই শ বছর আগে থেকেই নিয়মিতভাবে যাতায়াত করত। সেই ইতিহাস এখন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। বাঙালির সেই স্বর্ণময় ইতিহাসের পুরো দিক উন্মোচন করাই আমার আগামী দিনের কাজ হবে।’
ইফতেখার মাহমুদ | তারিখ: ০৫-০৭-২০১৩
Prothom-alo.,com, 07/07/2013

No comments:

Post a Comment